জেগে ওঠা নতুন ভূমি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে

নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে ভূমি ভাঙাগড়া নতুন কিছু নয়। ভাঙনে অনেক জমি হারিয়ে যায়। আবার নতুন নতুন চর জেগে ওঠে। প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক। এই ভাঙাগড়ার ভেতর দিয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গত চার দশকে ১০ লাখ হেক্টর নতুন ভূমি যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে। নতুন করে জেগে ওঠা এই ভূমি ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখাও শুরু হয়ে গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এই জমি ঘিরে নিজেদের মতো করে প্রকল্প সাজাতে শুরু করেছে। প্রণয়ন করছে কর্মপরিকল্পনা।
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে উন্নয়নকাজের জন্য ভূমির অভাব রয়েছে। আবার দেশকে বিভিন্ন দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। উন্নয়ন মহাযজ্ঞের মহাসড়ক থেকে কিছুতেই বিচ্যুত হওয়া চলবে না। এ জন্য উদ্যোগের পাশাপাশি চাই সঠিক পরিকল্পনাও। অনেক সময় পরিকল্পনা ও উদ্যোগ থাকলেও ভূমির অভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক উদ্যোগ হোঁচট খায়। নদী ও সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা নতুন ভূমি তাই নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। উপকূলবর্তী হওয়ায় নতুন ভূমিতে গভীর সমুদ্রবন্দর কিংবা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার স্বপ্ন যেমন দেখা যেতে পারে, তেমনি এলএনজি টার্মিনাল করার চিন্তাভাবনাও করা যেতে পারে। নির্মাণ করা যেতে পারে বিদ্যুেকন্দ্র। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের। স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়গুলো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে শুধু মহেশখালীতে জেগে ওঠা ৫০ হাজার একর জমি নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিযোগিতা। এখানে অর্থনৈতিক এলাকা গড়ে তোলার আগ্রহ যেমন আছে, তেমনি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের আগ্রহও প্রকাশ পেয়েছে। পর্যটন অঞ্চল গড়ে তুলতে চায় বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় চায় এলএনজি টার্মিনাল।
উপকূলীয় এলাকার ভূমি ব্যবহারের আগে সেখানকার ভূ-প্রাকৃতিক বিষয়ে গভীর দৃষ্টি দিতে হবে। একদিকে এসব এলাকার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য জটিল; অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয় যাতে না ঘটে সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। কারণ এমন অনেক জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ এসব এলাকায় থাকতে পারে, যেগুলো বিপন্নপ্রায়। স্বাভাবিকভাবেই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। আমরা আশা করব, নতুন করে জেগে ওঠা জমি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমেই ব্যবহার করা হবে।