চুযাডাঙ্গাসহ দেশের ৪ জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে শরিফ রানাসহ (৪১) ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া কমপক্ষে ৪৩ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনা জেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যাত্রীবাহী দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাসের দুই চালকসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ৯ জন। উপজেলার জয়রামপুর কাঁঠালতলায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন- ঢাকার কবিরপুর জরিনাবাজার এলাকার শাহজাহানের ছেলে দর্শনা ডিলাক্স পরিবহনের চালক দুলাল (৩৭), ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নাটুপাড়ার জলিল ওরফে জরিপ মণ্ডলের ছেলে পূর্বাশা পরিবহনের চালক শান্তি (৩৫) ও মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থানার বাগোয়ন গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে আরজ (২৬)। আহতরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার হরিয়ানপুর গ্রামের শফিকুর রহমানের মেয়ে কোহেলী (২৫), চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পৌর এলাকার ইসলামপুরের আব্দুল খালেকের ছেলে পূর্বশা পরিবহনের সুপারভাইজার সৌরভ (২২), দামুড়হুদা উপজেলার বুইচিতলা গ্রামের নজির আহম্মেদের ছেলে সুজন (৩০) ও তার স্ত্রী বেলী (২৬), মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থানার বাগোয়ান গ্রামের ওমর আলীর স্ত্রী হালিমা (৪০), চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বড় বলদিয়া গ্রামের শাহিনুর (৩৫) ও তার মেয়ে দিশা (৮), তাসিন (২) ও একই গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে শান্ত ( ১৬)। এরা সবাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দামুড়হুদা থানার ওসি লিয়াকত হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দর্শনা ডিলাক্স বাসটি দর্শনার দিকে আসছিল। আর দর্শনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল পূর্বাশা পরিবহনের একটি বাস। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর কাঁঠালতলায় পৌঁছলে পরিবহন দু’টির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের দুই চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান আরজ নামে আরও একজন।
টাঙ্গাইল : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পূর্বপাড়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের ছেলে শরিফ রানাসহ (৪১) ৭ জন নিহত হন। এ সময় কমপক্ষে আরও ৩০ জন আহত হন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা থেকে ঢাকাগামী সরকার পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ঘন কুয়াশার কারণে সেতুর ওপর ঢাকাগামী একটি গরুর ট্রাককে পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এ সময় পেছন থেকে আরও একটি বাস ওই বাসকে ধাক্কা দেয়। এতে সরকার পরিবহন বাসটি সেতুর রেলিংয়ের ধাক্কায় সেতুর উপর উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই কমপক্ষে চারজন নিহত হন। পরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে দমকল বাহিনী ও সেতু থানা এবং ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করতে যায়। পথিমধ্যে ঘন কুয়াশার কারণে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর দুটি পিকআপ ধাক্কা লেগে সেতু পশ্চিম থানার চালক, কনস্টেবল ও দমকল বাহিনীর ৩ সদস্যসহ ৫ জন আহত হন। একই স্থানে পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় আরও ৬ জনসহ প্রায় ৩০ জন আহত হন। এ দুর্ঘটনার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখেরুজ্জামান জানান, তাদের কাছে ৬টি মৃতদেহ রয়েছে। তাদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ ছাড়া ভূমিমন্ত্রীর ছেলের লাশ তাদের গ্রামের বাড়ি ইশ্বরদীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পাবনা : পাবনার সদর উপজেলায় পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাবনার সদর উপজেলার মনোহরপুরে ট্রাক-অটোভ্যানের সংঘর্ষে সুইট (২৪) নামে এক যাত্রী নিহত হন। অপর দুর্ঘটনাটি ঘটে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের আতাইকুলার আকিজ জুট মিলের সামনে। সকাল ৯টার দিকে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পুলিশের পিকআপভ্যানের সংঘর্ষের আল মাহমুদ (৩২), রুহুল আমিন (৩৫) ও আব্দুস সবুর (৩৬) নামের তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল হাসান জানান, টেবুনিয়া থেকে অটোভ্যানটি গাছপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। মনোহরপুরে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে অটোভ্যানের চালক ও দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুইটকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দু’জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অপর দুর্ঘটনার বিষয়ে আতাইকুলা থানার ওসি গোলাম রসুল জানান, সাঁথিয়া থেকে শোভন নামে একটি যাত্রীবাহী বাস পাবনার দিকে যাচ্ছিল। আর পাবনা থেকে সুজানগরের দুলাই যাচ্ছিল পুলিশের একটি পিকআপভ্যান। এ সময় পাবনা-ঢাকা মহাসড়কের আতাইকুলার আকিজ জুট মিলের সামনে আসলে ঘন কুয়াশার কারণে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম : জেলার হাটহাজারীতে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মোহাম্মদ রাশেদ (২৬) নামে মোটরসাইকেলের এক আরোহী নিহত হয়েছেন। খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের বড়দীঘির পাড় এলাকায় সকাল ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম জানান, সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে দুই বন্ধু হাটহাজারী সদরের দিকে যাওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা দু’জন গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাশেদকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর আরোহী সালাউদ্দিনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।