আজ শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

ঢাকা টঙ্গীর তুরাগ তীরে আজ শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে অবশ্য চুয়াডাঙ্গা জেলা থাকছে না। দ্বিতীয় পর্বে চুয়াডাঙ্গা জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আজ তুরাগ তীরে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঢল নেমেছে। আল্লাহতে সমর্পিত মুসল্লিগণের জিকির-আজকারে গুঞ্জরিত, মুখরিত ইজতেমা ময়দান। সমবেত মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আজ জুমার নামাজ আদায় করবেন। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ২০১১ সাল হতে দুই পর্বে ইজতেমা সম্পন্ন করার রীতি চালু করা হয়। এবার ৬৪টি জেলার পরিবর্তে ৩২টি জেলার মুসল্লিগণ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন। অবশিষ্ট ৩২টি জেলার মুসল্লিগণ আগামী বছরের ইজতেমায় অংশ নেবেন। সে হিসাবে এবারের দ্বিতীয় পর্বে চুয়াডাঙ্গা থাকলেও আগামীবার চুয়াডাঙ্গা থাকবে না। থাকবে মেহেরপুর। অবশ্য যে ৩২ জেলার মুসল্লিরা এবার অংশ নিচ্ছেন না, সেসব জেলায় ইতোমধ্যে আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দাওয়াতি কার্যক্রমে এই আঞ্চলিক ইজতেমাও ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ উদ্যোক্তাদের।
হিজরি ১৩৪৫ সনে মাওলানা ইলিয়াস আখতার কান্ধলবি (রহ.) তাবলিগ জামাতের সূত্রপাত করেন। তিনি গাশত অর্থাৎ মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নামাজ ও কালেমার দাওয়াত পৌঁছে দিতে শুরু করেন। মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভির (রহ.) মৃত্যুর পর তাবলিগ জামাতের মুবাল্লিগের দায়িত্ব লাভ করেন তার সুযোগ্যপুত্র মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি (রহ.)। গত শতাব্দীর মধ্যভাগে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সেই সময়েই এই সম্মেলনের কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেয়া হয়। অবশ্য এর আগে ১৯৪১ সালে প্রথম ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদ প্রাঙ্গণে। পরবর্তীতে, ১৯৪৬ সালে ঢাকাস্থ কাকরাইল মসজিদ প্রাঙ্গণে ইজতেমা হয়। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে, ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে এবং ১৯৬৬ সালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয় টঙ্গীর পাগার গ্রামে। ১৯৬৭ সাল থেকে তুরাগ পাড়ের ময়দানে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আজ বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের তারই ধারাবাহিকতায় বার্ষিক সমাবেশ। ১৯৪৬ সাল থেকে তাবলিগ জামাতের ঐতিহাসিক সমাবেশ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের জন্য এটা অবশ্যই গৌরবের। দেশ ও বিদেশের লাখ লাখ মুসলিম নারী ও পুরুষ প্রতি বছর এই সমাবেশে যোগ দেন।
মূলত তাবলিগ জামাত শৃঙ্খলা এবং পরহেজগারির এক অনন্য অনুশীলন। একে ভ্রাম্যমাণ মাদরাসা বা শিক্ষালয় বললে ভুল বা অত্যুক্তি হয় না। সারাবছর তাবলিগ জামাতের মুসল্লিগণ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে এক মসজিদ থেকে আরেক মসজিদ পরিভ্রমণ করেন। মুসল্লিগণ সাংসারিক ও বৈষয়িক ব্যস্ততা পরিহার করে দ্বীনি অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন ও চর্চায় নিয়োজিত হয়ে থাকেন। বাড়ি বাড়ি গিয়েও লোকদের আল্লাহর পথে আহ্বান করেন। ইসলামী পরিভাষায় তারা দাওয়াতি কাজে আত্মনিয়োগ করেন। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, তাবলিগ জামাতের মুসল্লিগণ ঘুম-খাওয়া নাওয়াসহ জীবনের সব কাজই করেন ইসলামী নিয়মে ও সুশৃঙ্খলভাবে। জীবনের সব কাজকেই যে ইবাদত বিবেচ্য করে এবং আল্লাহর স্মরণ হতে গাফেল না হওয়ার জন্য সবসময় সচেষ্ট থাকেন।
বিশ্ব ইজতেমা সার্থক, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য বরাবরের মতো এবারও সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আল্লাহ এই আয়োজনকে কবুল করুন।