যেভাবে হত্যা করা হয়েছিলো কাজী আরেফকে

স্টাফ রিপোর্টার: ১৭ বছর আগে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে একটি বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ জনকে। ওই হত্যামামলার চূড়ান্ত রায়ের পর মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ৫ জনের মধ্যে ৩ জনের ফাঁসির রায় গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয়।
পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা নুরুজ্জামান লাল্টুর বাহিনী ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ্য মাঠে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলো বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছিলো। এই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত লাল্টু নিজেও পরে নিহত হয়েছিলেন।
কুষ্টিয়া জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং দৌলতপুর থানা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তালবাড়িয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে কালীদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সেদিন সন্ত্রাসবিরোধী জনসভা ছিলো জাসদের। তৎকালীন সরকারের অংশীদার জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী আরেফ ছিলেন ওই জনসভার প্রধান অতিথি। জেলা নেতারাসহ স্থানীয় নেতারা ছিলেন বিকালের ওই জনসভায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ জনের বক্তব্য শেষে ডায়াসে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন কাজী আরেফ। তিনি বক্তৃতার শুরুতেই বলেন, ‘সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’।
ঠিক ওই সময় পূর্ব দিকের তালবাড়িয়া এলাকা থেকে সশস্ত্র ঘাতক দল অস্ত্র উঁচিয়ে সভা মঞ্চের দিকে আসে বলে জানান ওই সভা পরিচালনাকারী তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ১২/১৫ জন সশস্ত্র ক্যাডার সভামঞ্চ ঘিরে ফেলে। তাদের মধ্য থেকে সাত-আটজন অস্ত্র হাতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে আসে। তারা ছিল লাল্টু বাহিনীর সদস্য।
তার মধ্যে রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু, আনোয়ার হোসেন, সাফায়েত হোসেন হাবিবকেও দেখার কথা জানান মামলার সাক্ষী খোরশেদ। এই তিনজনের মৃত্যুদণ্ডই বৃহস্পতিবার কার্যকর হয়েছে। মামলার এজহারে বলা হয়, মাথায় লাল গামছা বাঁধা কিলিং মিশনের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি উচ্চস্বরে বলেন, কেউ নড়াচড়া করবি না। জনসভার সব মানুষ অস্ত্র দেখে ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মঞ্চে থাকা আড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আজিবর রহমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে, তিনি এতে আহত হন। ফাঁকা গুলিবর্ষণে আতঙ্ক সৃষ্টি করে হামলাকারীরা মঞ্চের কাছে গিয়ে সবার নাম জানতে চায় বলে মামলার সাক্ষীরা জানান।
তালবাড়িয়া গ্রামের শমসের মণ্ডল মঞ্চ থেকে চলে যেতে চাইলে প্রথমেই তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর জাসদ নেতা লোকমান হোসেন, ইয়াকুব আলী ও ইসরাইল হোসেনকে হত্যা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় ডায়াসে দাঁড়ানো কাজী আরেফ অস্ত্রধারীদের বলছিলেন, আমার লোকদের এভাবে হত্যা করো না। আমরা কী দোষ করেছি? তোমরা বললে, আমরা না হয় এখানে রাজনীতি করব না। এভাবে মেরে কী লাভ তোমাদের? তখন অভিযানে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি কাজী আরেফের কাছে গিয়ে বলেন, তোর নাম কী? কাজী আরেফ নিজের নাম বললে ওই ব্যক্তি বলেন, তোকেই তো খুঁজছি। এরপর অন্য দুজন গুলি চালালে মঞ্চের ওপরেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন কাজী আরেফ।