আলমডাঙ্গার ভোদুয়া গ্রামের ৩-৪শ জনের নামে মামলার ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা বাড়ি ছাড়া

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের ২৫ এসএসসি পরীক্ষার্থী বাড়ি ছাড়া। অনেকে দিনে বাড়িতে থাকলেও সন্ধ্যার পর গ্রেফতার আতঙ্কে দিচ্ছে গাঢাকা। গরুচোর সন্দেহে ৬ গরুব্যবসায়ীকে গণপিটুনিসহ প্রায় ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে ভোদুয়া গ্রামের ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ ৩-৪শ ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়েরের ঘটনায় এসএসসি পরীক্ষার্থী কিশোরদের মাঝে এ গ্রেফতার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার রাতে আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোদুয়া গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন ও রেজাউল হকের একটি করে মোট ২টি গরু সঙ্ঘবদ্ধ চোরচক্র চুরি করে। রাতেই গরুচুরির বিষয়টি টের পেয়ে কয়েকজন গ্রামবাসি মসজিদের মাইকে বিষয়টি প্রচার করে দ্রুত বের হওয়ার আহ্বান জানায়। মাইকে প্রচারের পর গ্রামবাসি রাত পৌণে ৩টার দিকে আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়কে নেমে পড়ে। সে সময় ভোদুয়া গ্রামের কেউ মোবাইলফোনে গরুচুরির বিষয়টি পার্শ্ববর্তি বিনোদপুর গ্রামে ছড়িয়ে দেয়। ফলে বিনোদপুর গ্রামবাসিও রাস্তায় নেমে পড়েন। ভোদুয়া গ্রামবাসী আলমডাঙ্গা-জামজামি সড়ক ধরে আলমডাঙ্গার দিকে ছুটে যাওয়ার সময় যমুনামাঠের মধ্যে পৌঁছুলে রাস্তার পাশের গাছের সাথে চুরি হওয়া ২টি গরু বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। সে সময় গ্রামবাসী বেঁধে রাখা গরুর নিকটবর্তীতে রাস্তায় একটি পিকাআপভ্যান দেখতে পায় (ঢাকা-মেট্রো-ন-১৮-৫০২৩)। পিকাপভ্যানটিকে ঘেরাও করে গ্রামবাসী ৫ যাত্রী ও ড্রাইভারকে নামিয়ে নিয়ে জেরা শুরু করে। পিকাআপভ্যানের যাত্রীদের গরুব্যবসায়ি পরিচয় পেয়ে গ্রামবাসী নিশ্চিত ধারণা করে নেয় এরাই গরুচোর। চুরি করা গরু নিতে পিকআপ নিয়ে এসেছে। এমনটা ভেবে নিয়ে গ্রামবাসীরা ড্রাইভারসহ ৬ জনকে গণধোলাই দিতে শুরু করে। এরই মধ্যে আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ নির্মমতায় যোগ দেয়। সে সময় গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। গত রোববার গণপিটুনির শিকার দামুড়হুদা উপজেলার বড় দুধপাতিলা গ্রামের মিনা মণ্ডলের ছেলে আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে ওই ঘটনায় ৫২ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ৩-৪শ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় এজাহার দায়ের করেন।
ভোদুয়া গ্রামের ৩-৪শ অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে মামলা দায়েরের ঘটনায় ওই গ্রামের পুরুষ মানুষ রাতে বাড়ি থাকছে না। গ্রামের ২৫ এসএসসি পরীক্ষার্থী। এই ২৫ কিশোরও গ্রেফতার আতঙ্কে রাতে ঘরে থাকতে পারছে না। ফলে লেখাপড়ার চরম ব্যাঘাত ঘটছে। এ ব্যাপারে শিক্ষক-অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। ২৫ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে শিক্ষক-অভিভাবকমহল জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।