বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন ছিলো শান্তিপূর্ণ : সিইসি

৫০টি ভোট কেন্দ্র ও মাধবদী পৌরসভার ভোট গ্রহণ স্থগিত, পাঁচ এসআইসহ ১০ সদস্য বরখাস্ত
স্টাফ রিপোর্টার: কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেছেন, সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভায় ৩ হাজার ৫৫৪ কেন্দ্রের মধ্যে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় ৫০টি ভোট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হওয়ায় নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভার ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। আর দায়িত্বে অবহেলার কারণে কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত সোয়া ৮টায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনকে কেন্দ্রে করে গতকাল দিনভর ব্যস্ত সময় পার করেছে নির্বাচন কমিশন ও কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ৫ সহকারী পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ও একজন এনএসআই সদস্যসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ জনকে সময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। দায়িত্বে অবহেলার দায়ে চন্দনাইশ ও কালকিনি পৌরসভার ৫টি কেন্দ্র থেকে সকাল ১১টার দিকে পুলিশের সব সদস্যকে প্রত্যাহার করে নির্বাচন কমিশন।
মাধবদী পৌরসভায় যা ঘটেছে: নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কে রিটার্নিং অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম গতকাল দুপুরের দিকে ই-মেইলে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে জানান, ১২টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬টি ভোট কেন্দ্রের ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও ভাঙচুর হওয়ায় ওইসব কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছেন। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে-১,৪,৭,৯,১১ ও ১২। অন্যান্য ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আতঙ্কে রয়েছেন। বেশিরভাগ প্রিসাইডিং অফিসার দুষ্কৃতকারী কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার এ অবস্থায় ওই পৌরসভার নির্বাচন সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানান। এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে মাধবদী পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
পাঁচ এসআইসহ ১০ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ: নির্বাচন কমিশন গতকাল দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে পুলিশের ৫ উপপরিদর্শকসহ (এসআই) ১০ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য পুলিশ প্রধানকে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছে। ৫ এসআই হলেন কালকিনি থানার আব্দুল কুদ্দুস শিকদার, রাজৈর থানার শরিফ আবদুর রশিদ, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার নাজমুল হোসেন, বান্দরবান থানার আলমগীর ভূঁইয়া ও লোহাগড়া থানার মো. সোলাইমান। কয়েকটি পৌরসভার রিটার্নিং অফিসাররা নির্বাচন কমিশনকে এসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ জানালে কমিশন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।
ইসিতে আগুন নেভানোর গাড়ি: পৌর নির্বাচনে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এবার ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও মোতায়েন রেখেছে নির্বাচন কমিশন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই রাখা হয় ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি। ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী জানান, দুর্ঘটনা ও আগুন লাগার আশঙ্কা থেকে গাড়িটি স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে।
সিইসির ব্রিফিং: গতকাল ভোট গ্রহণ শেষে রাতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি দাবি করেন কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পৌরসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এ নির্বাচনে যে কোনো ধরনের অনিয়ম ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই সতর্ক ছিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সহায়তায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সারাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও গণমাধ্যমের অভিযোগ আমলে নিয়ে তা যাচাই করে যাথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য প্রার্থী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে ভালোভাবে ফলাফল প্রকাশের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন সিইসি। বিএনপির পক্ষ থেকে ২০০ পৌরসভায় অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৬০টি কেন্দ্রে অনিয়মের বিষয়ে তারা বলেছে বলে আমরা শুনেছি। তবে বেশিরভাগ অভিযোগ বিএনপির কাছ থেকেই এসেছে। নির্বাচন কর্মকর্তার কাছ থেকেও শুনেছি। যাচাই বাছাই করে আমলে নিয়ে বেশ কিছু কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছি, সেখানে আবার ভোট নেয়া হবে। জালভোট প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, জালভোটের ঘটনা দেখেছি। আমরা দৃঢ়তার সাথে এটা মোকাবেলা করেছি। এজন্য কয়েকজনকে শাস্তিও দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আপনারা অসহায় এবং আপনাদের নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, এটাতো প্রথম থেকেই বলা হচ্ছে। যখন আমরা রাজনৈতিক দলের কাছে সহায়তা চেয়েছি তখন বলা হয়েছে আমরা অসহায় বোধ করছি। এখানে অসহায়ত্বের কিছু নাই। সকলের সহায়তা নিয়েই একটা মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলাফল এটা। তিনি বলেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনো পরিবর্তিত হয়নি। নির্বাচনে হেরে গেলে নিয়মানুযায়ী আপিল করার সুযোগ আছে। সেটা না করে তাত্ক্ষণিক মারামারির প্রবণতা দেখা যায় এটা দুর্ভাগ্যজনক। নির্বাচন নিয়ে কমিশন সন্তুষ্ট কি-না জানতে চাইলে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। এখানে সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কিছু নাই। এটা জনগণ মূল্যায়ন করবে। পুরো ফলাফল জানার পরই কতো শতাংশ ভোট পড়েছে জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।