চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে বিপুল ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু মেয়র নির্বাচিত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বিপুল ভোটে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি মোবাইলফোন প্রতীক নিয়ে ২৪ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন পেয়েছেন ১০ হাজার ৫৬ ভোট। প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ১৪ হাজার ৯২৭। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা পেয়েছেন ৭ হাজার ৭৫৬ ভোট। আর ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রাথী তুষার ইমরান হাত পাখা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ১৫৪ ভোট।
গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। গোপন ব্যালটে ভোটার সাধারণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিলো নিরাপত্তা বেষ্টনিতে ঢাকা। নির্বিঘ্নে নিরপেক্ষ অবাধ পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পেরে ভোটারদের মাঝে ছিলো উৎসবের আমেজ। ইচ্ছেমতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরে নবীন-প্রবীণ ভোটাররা সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর ভোটাধিকার প্রয়োগ করার পরিবেশ পেলাম।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৩১টি কেন্দ্রের কোনোটিতেই উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি কিংবা তেমন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে শাহীনা আক্তার আঙ্গুর প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৮১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিনা ইয়াসমিন শম্পা চুড়ি প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৫৬৬ ভোট পেয়েছেন। ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে সুলতানা আরা বেগম রত্মা আঙ্গুর প্রতীক নিয়ে ৬ হাজার ৫৯১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসিমা খাতুন পুতুল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫৫ ভোট। ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে শেফালী খাতুন ভ্যানিটি ব্যাগ প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ৪২৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নূর জাহান চকলেট প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ হাজার ৫০৫ ভোট।
সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর আলম টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৪০১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিল্লাল হোসেন বেল্টু পেয়েছেন ডালিম প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ১২০ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মুন্সি মো. রেজাউল করিম খোকন গাজর প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল আজিজ জোয়া. পানির বোতল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৭ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে নাজমুস সালেহীন লিটন পাঞ্জাবি প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৮১৮ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাহিদুল ইসলাম সোহেল ব্রিজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩৪০ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জাহাঙ্গীর আলম মল্লিক উটপাখি প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৪৮ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। তিনি এবারের মেয়াদ পূর্ণ করলে একই ব্যাক্তির একই পদে দায়িত্ব পালনের টানা ৩২ বছর পূর্ণ হবে। যা বিরল ঘটনা। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ সেলিম ডালিম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৫৪৫ ভোট। ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে গোলাম মোস্তফা শেখ মাস্তার ডালিম প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৭৭৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুন্সি আলাউদ্দীন আহম্মেদ টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ১৫১ ভোট পেয়েছেন। ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে রাশেদুল হাসান টেবিল ল্যাম্প নিয়ে ২ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুস সামাদ ডালিম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৬ ভোট। ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আবুল হোসেন গাজর প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৬০০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর সাইফুল আরিফ বিশ্বাস পানির বোতল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯২৬ ভোট। ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সিরাজুল ইসলাম মনি পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৯১৪ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তিনিও পর পর কয়েক দফা নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিলর পদে রেকর্ড গড়েছেন। তাকে নির্বাচিত করায় তিনি তার এলাকার ভোটারদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুজ্জামান তালু পাঞ্জাবি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৯৮ ভোট। ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে একরামুল হক মুক্তা গাজর প্রতীক নিয়ে ১হাজার ৮৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাক উদ্দীন আহম্মেদ ডালিম ডালিম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৬৮৯ ভোট।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভায় মোট ভোটার ৬০ হাজার ১০৫ জন। এর মধ্যে পোল হয়েছে ৪৪ হাজার ৫৪৯ ভোট। মেয়র পদে বাতিল হয়েছে ৫৯৮ ভোট। বৈধ ভোটের সংখ্যা ৪৩ হাজার ৯৫১। গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়। সকালে ভোট কেন্দ্রগুলোতে কিছুটা থম থমে ভাব ফুটে উঠলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে গুমটভাব কেটে যায। ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে উঠে। কোন কোন কেন্দ্রে লম্বা লাইন পড়ে যায়। মাঝে মাঝেই ভিড় সামলাতে হিমশীম খেতে হলেও প্রশাসনিক পর্যাপ্ত ব্যবস্থার কারণে কোনো প্রকারের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই কেন্দ্রে উপস্থিত সকল ভোটারই তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটগ্রহণ শেষে শূরু হয় গণনা। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে খোলা কন্ট্রলরুমে একের পর এক ভোটকেন্দ্রের ফলাফল আসতে শুরু করে। তদরাকি করেন রিটার্নিং অফিসার তথা চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আঞ্জুমান আরা। গত পরশু থেকেই চুয়াডাঙ্গা প্রশাসন নিরাপত্তা বলায় গড়ে তোলে। স্ট্রাইকিং ফোর্স টহল দিতে থাকে গতপরশু থেকেই। গতকাল সকাল হাতে না হতে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালটসহ সংশ্লিষ্টরা পৌছুতে শুরু করেন। ভোটাররা নিবিঘ্নে ভোট দিতে পেরে প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। অনেকেই পুলিশ ও বিজিবির কর্তব্যপরায়নতাকে সাধুবাদ জানান।