বিপুল ভোটের ব্যবধানে দর্শনায় নৌকা প্রতীকের জয় : ৩ মেয়রকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এমপি টগর

Darsana Pourosova---(Awamilig---Motiar Rahman)হারুন রাজু/হানিফ মন্ডল: অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটলো। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে দর্শনা পৌর নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন মতিয়ার রহমান। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মহিদুল ইসলামের ভরাডুবি হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা আশকার আলী রয়েছেন ২য় অবস্থানে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দর্শনা পৌর নির্বাচন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৬টি ভোটকেন্দ্রে ৭৮টি বুথের মাধ্যমে ২৪ হাজার ১৩ জন ভোটারের মধ্যে ১৮ হাজার ২৮৫ ভোটার গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বাতিল হয়েছে ২৫৯ ভোট। ভোট পোল হয়েছে ৭৭ দশমিক ২২ শতাংশ। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার ২ হাজার ৫৯৭ ভোট বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে আরো ৩টি ভোট কেন্দ্র। দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। দুপুরের পর থেকে পুরুষ ভোটারদের লম্বা লাইন পড়ে যায় ভোট কেন্দ্রগুলোতে। নির্বাচন চলাকালীন কোনো ভোটকেন্দ্রে ঘটেনি অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা। ভোটকেন্দ্রসহ দর্শনার প্রধান প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিলো পুলিশসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক বাহিনীর জোরদার টহল। জুডিসিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ছিলো অব্যাহত। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচনের রিটানিং অফিসার ফরিদুর রহমান ছুটেছেন প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে। পুলিশ, আনসার, ৱ্যার ও বিজিবি কর্মকর্তাদের টহল ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ নির্বাচনে আ.লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মতিয়ার রহমান নৌকা প্রতীকে ১১ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা আশকার আলী জগ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৫৯ ভোট। বিএনপি মনোনীত বর্তমান মেয়র মহিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭ ভোট। সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর আম্বিয়া খাতুন ফুট্টুরি (আঙ্গুর) প্রতীকে ২ হাজার ৩৩৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর বিলকিস খাতুন (কাঁচি) প্রতীকে ১ হাজার ৬৭৭, ডা. খালেদা খানম (ভ্যানিটিব্যাগ) প্রতীকে ৭২০, মনিরা বেগম (মৌমাছি) প্রতীকে ৫৮৫ ও মর্জিনা খাতুন (গ্যাসের চুলা) প্রতীকে পেয়েছেন ৪৪১ ভোট। ৪, ৫ ও ৭নং ওয়ার্ডে জাহানারা খাতুন (আঙ্গুর) প্রতীকে ১ হাজার ৭১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর কাঞ্চন বিবি (পুতুল) প্রতীকে ১ হাজার ৪২৩, মরিয়ম বেগম (ভ্যানিটিব্যাগ) প্রতীকে ১ হাজার ২৭৯ ও শিউলী খাতুন (কাঁচি) প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫৯ ভোট। ৬, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সুরাতন বিবি (চকলেট) প্রতীকে ১ হাজার ৭৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহিমা খাতুন (মৌমাছি) ১ হাজার ২৩২, শামিমা খাতুন (কাঁচি) প্রতীকে ১ হাজার ২০৪, ফাহিমা খাতুন (আঙ্গুর) প্রতীকে ৭৭০, খুশি বেগম (ভ্যানিটিব্যাগ) প্রতীকে ৬৭৫ ও সকিনা বেগম (গ্যাসেরচুলা) প্রতীকে ৫৫৩ ভোট পেয়েছেন।
এদিকে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে হাসান খালেকুজ্জামান (পানির বোতল) প্রতীকে ৮৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাসির উদ্দিন খেদু (টেবিলল্যাম্প) প্রতীকে পেয়েছেন ৬৭৭ ভোট। ২নং ওয়ার্ডে সাহিকুল আলম অপু (উটপাখি) প্রতীকে ৭৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ. জলিল (টেবিলল্যাম্প) প্রতীকে পেয়েছেন ৬২১ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে রবিউল হক সুমন (উটপাখি) প্রতীকে ১৪০৯ ভোট পেয়ে আবারো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক কাউন্সিলর কাজল আহম্মেদ (পাঞ্জাবি) প্রতীকে পেয়েছেন ৩১৭ ভোট। ৪নং ওয়ার্ডে মনির সরদার (ব্ল্যাকবোর্ড) ৭৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আ. মান্নান (উটপাখি) প্রতীকে পেয়েছেন ৫২০ ভোট। ৫নং ওয়ার্ডে নজরুল ইসলাম (উটপাখি) প্রতীকে ৭২১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল ইসলাম (টেবিলল্যাম্প) প্রতীকে পেয়েছেন ৪৩৫ ভোট। ৬নং ওয়ার্ডে রেজাউল ইসলাম (পানির বোতল) প্রতীকে ১ হাজার ৭৩ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল হুদা সোহেল তরফদার (টেবিলল্যাম্প) প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫৫ ভোট। ৭নং ওয়ার্ডে কানচু মাতবর (উটপাখি) প্রতীকে ৫৭১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজুর রহমান মতি (ডালিম) প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩২ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে চান্দু মাস্টার (পানিরবোতল) প্রতীকে ৯৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান কাউন্সিলর শরীফ উদ্দিন (উটপাখি) প্রতীকে পেয়েছেন ৬৭৬ ভোট। ৯নং ওয়ার্ডে মঈনুদ্দিন মন্টু (ব্ল্যাকবোর্ড) প্রতীকে ৭৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশির উদ্দিন আশু (পাঞ্জাবি) প্রতীকে পেয়েছেন ৪২২ ভোট।
নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরের দর্শনা পুরাতন বাজারস্থ বাসভবনে ছুটে আসেন দর্শনা পৌরসভার ৩য় বারের মতো নির্বাচিত মেয়র মতিয়ার রহমান, জীবনগরের স্বতন্ত্র প্রার্থী আ.লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র যুবলীগ নেতা ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু। এ সময় এমপি টগর নির্বাচিত মেয়রদের গলায় ফুলেল মালা দিয়ে বরণ করে নেন। করা হয় মিষ্টি মুখ। ৩ মেয়রকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এমপি টগর। আনন্দ মুখর এ পরিবেশে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদ, জীবননগর উপজেলা চেয়ারম্যান আ. লতিফ অমল, দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, যুগ্নসম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, আ.লীগ নেতা আলী মুনসুর বাবু, গোলাম ফারুক আরিফ, আতিয়ার রহমান হাবু, ইদ্রিস আলী, সোহরাব হোসেন খান, দর্শনা পৌর আ.লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, ওমর আলী, ইদ্রিস আলী প্রমুখ।