বিমান বাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আজ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। দারিদ্র্যের হার ২২.৪ ভাগে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। বাজেটের পরিধি চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগই নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। আমরা বেতনভাতা ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। পৃথিবীর কোনো দেশে এর নজির নেই। সরকারের নানামুখী অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে এ সবকিছু সম্ভব হয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এই সম্পদকে আমরা উন্নয়নের কাজে লাগাতে চাই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে যশোরে অবস্থিত বিমান বাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছি পরমুখাপেক্ষি হয়ে নয়, নিজেরাই আমরা করতে পারি। বাঙালি বিজয়ী জাতি। বিজয়ীর বেশে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাবে। উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবো। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা প্রতিষ্ঠা করবো।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা উপলব্ধি করেছিলেন, একটি স্বাধীন দেশের জন্য একটি শক্তিশালী পেশাদার ও আধুনিক বিমান বাহিনী অপরিহার্য। তাই স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তিনি একটি দক্ষ ও চৌকস বিমান বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে সে সময়ের অত্যাধুনিক মিগ-২১ সুপারসনিক ফাইটার স্কোয়াড্রন, এমআই-৮ হেলিকপ্টার, এএস-২৪ ও ২৬ পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার এবং এয়ার ডিফেন্স র্যাডার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সংযোজন করেন। জাতির পিতা চট্টগ্রামে জহুরুল হক ঘাঁটির গোড়াপত্তন করেন। ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর আমরা এ ঘাঁটিকে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড প্রদান করেছি। ’৯৬-এর সরকারের সময় আমরা বিমান বাহিনীতে চতুর্থ প্রজন্মের অত্যাধুনিক মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান, সি-১৩০ পরিবহন বিমান এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা র্যাডার সংযোজন করেছি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলা, উদ্ধার তত্পরতা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বন্ধুপ্রতিম যেকোনো দেশের এ জাতীয় প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও আমাদের বিমান বাহিনী অবদান রাখছে। নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প এর উদাহরণ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কমিশনপ্রাপ্ত নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলেন তার যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে পেশার মানোন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকবেন। প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করে ব্যক্তি ও পেশাগত কাজে প্রয়োগ করবেন।
কুচকাওয়াজে ৭২তম ফ্লাইট কোর্সের ৪৩ জন ও ডিরেক্ট এন্ট্রি ২০১৫/বি কোর্সের ৩২ জনসহ ৭৫ জন ফ্লাইট ক্যাডেট ও অফিসার ক্যাডেট কমিশন লাভ করেন। এদের মধ্যে ১১ জন মহিলা ক্যাডেটও কমিশন লাভ করেছেন। ফ্লাইট ক্যাডেট আন্ডার অফিসার মো. আবু হাসান মেহেদি সেরা চৌকস কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ এবং ফ্লাইট ক্যাডেট মোহাম্মদ আলী জেনারেল সার্ভিস প্রশিক্ষণ কৃতিত্বের জন্য ‘কমান্ড্যান্টস ট্রফি’ লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় তার সাথে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল আবু এসরার এবং বিমান বাহিনী একাডেমির কমান্ড্যান্ট এয়ার কমডোর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।