চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই প্রায় অর্ধেক : প্রতি পিরিয়ডেই একাধীক শ্রেণিতে পাঠদান ব্যাহত

আলম আশরাফ: চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করার আগামীকাল ১৩ ডিসেম্বর শেষ দিন। এবারই প্রথমবারের মতো অনলাইনে আবেদন করতে হচ্ছে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। এক ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষায় থাকবে ৫০ নম্বরের প্রশ্ন। বাংলা ও ইংরেজিতে ১৫ করে ৩০ আর অংকে ২০।
চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভর্তির আসন সংখ্যা একই। দুটি বিদ্যালয়েই রয়েছে প্রভাতী ও দিবা শাখা। দুটি বিদ্যালয়ের প্রতিটিতেই প্রভাতী ও দিবা শাখায় ১২০ জন করে ২৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সে হিসেবে দুটি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে মোট ৪৮০ শিশুশিক্ষার্থী। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে? নেয়া হবে মাত্র ২৪ জন করে। দুটি বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে মোট ৪৮ জন ছাত্র-ছাত্রী। এদের অবশ্যই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনীতে অংশ নেয়া হতে হবে। অনলাইনে আবেদন করতে gsa.teletalk.com.bd লগইন করুন। ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আবেদকদের পরীক্ষা বালিকা বিদ্যালয়ে ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আবদকদের পরীক্ষা হবে ভি.জে উচ্চ বিদ্যালয়ে।
চুয়াডাঙ্গার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের ভর্তির জন্য অভিভাকদের অধিকাংশই উদগ্রীব থাকেন। পূর্বে তৃতীয় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রায় সমানভাবে ভর্তির সুযোগ রাখা হলেও বিদ্যালয় দুটি দু শিফটে উন্নীত হওয়ার সাথে সাথে তৃতীয় শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী ভর্তির পদ্ধতি চালু হয়। এতে অবশ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই জেলার ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ থাকে না। তাছাড়া বিদ্যালয় দুটি নানা সঙ্কটে ভোগার কারণে শিক্ষার মান নিয়েই প্রশ্ন ওঠে, উঠছেও। অভিভাকদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে অধিকাংশ ক্লাসই হয় না। এ প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে বিদ্যালয় দুটিতে শিক্ষক সঙ্কটের ভয়াবহ চিত্র। তাছাড়া টয়লেটের নোংরা দশা বর্নণারও অযোগ্য। আর পানীয় জল? ৪টি টিউবওয়েল থাকলেও প্রতিটির পানিতেই আর্সেনিক নামের বিষ। আর পৌর সরববরাহকৃত পানি? ছাত্ররা সেদিকে ঘুরেও তাকাতে চায় না। কেন? ডায়রিয়া ভীতি। সে কারণে বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার দাবি দীর্ঘদিনের। টিফিন? ফি আদায় আর টিফিন দেয়ার হিসেব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে প্রশ্ন।
চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ ৫১টি। দীর্ঘদিন ধরেই শূন্য রয়েছে ২০টি পদ। ৫১ জনের স্থলে ৩১ শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। কোনো কোনো শিক্ষক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে আন্তরিক নন। প্রধান শিক্ষক নূর ই আলম মোরশেদাকেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি বলেছেন, দু শিফটের স্কুল। মোট ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। প্রতিটি পিরিয়ডে দরকার ১৬ জন শিক্ষক। বর্তমানে যে শিক্ষক রয়েছে তা দিয়ে প্রতি পিরিয়ডি ১৩ জন শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি থাকে ৩টি শ্রেণির ক্লাস। ফলে সমস্যা দেখা দেয়। শিক্ষক না থাকায় কিছু শ্রেণিতে বিশৃঙ্খলা সামলাতে প্রধান শিক্ষককেই ছুটতে হয়। পানীয় জল? প্রধান শিক্ষক বলেছেন, টিউবওয়েলগুলোর পানি আর্সেনিকযুক্ত। ট্যাপের পানিতেও ছাত্রদের অনাগ্রহ। এ কারণে বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানীয় পানির প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্প হাতে নেয়া দরকার।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষক সঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে। ৫৩ শিক্ষকের স্থলে রয়েছে ৩২ জন। শূন্য রয়েছে ২১টি সহকারী শিক্ষক পদ। কবে নাগাদ পূরণ হবে? কেউ জানেন না। শিক্ষক সঙ্কটের কারণে প্রতিদিনই প্রায় প্রতি পিরিয়ডেই কয়েকটি ক্লাসে পাঠদান ব্যাহত হয়। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শফিকুন নাহার। তিনি বলেছেন, বিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষক সঙ্কট, তেমনই ক্লাস রুমেরও অভাব। শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়ে দুটি বিদ্যালয়েরই দু প্রধান অভিন্ন ভাষায় বলেছেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনও শিক্ষক সঙ্কটের বিষয়ে অবগত আছেন। তাছাড়া বিভাগীয় পদস্থ কর্মকতার্দের নিকট এ বিষয়ে মাঝে মাঝেই তো আবেদন প্রেরণ করা হয়। সাড়া মেলে না।
কবে সাড়া মিলবে? কবে দুটি বিদ্যালয়ের সঙ্কট কাটবে? প্রশ্ন থাকলেও জবাব নেই। তবুও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ৫০ নম্বরের প্রশ্নের জবাব দিয়েই ভর্তিযুদ্ধে টিকতে হবে। ওই অপ্রতুলতা মেনে নিয়েই পড়তে হবে। দূরে দাঁড়িয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ছাড়বেন অভিভাবকেরা। এই সমাজের কী বাস্তবতারে বাবা!