সেই সাহেবপুর বদলেছে অনেক : সাহেব পাওয়ার স্বপ্ন সকলের

সেই সাহেবপুর বদলেছে অনেক : সাহেব পাওয়ার স্বপ্ন সকলের
সেই সাহেবপুর বদলেছে অনেক : সাহেব পাওয়ার স্বপ্ন সকলের
স্টাফ রিপোর্টার: সেই সাহেবপুরে এখনো কেউ সাহেব হতে পারেননি। তবে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়েছেন অনেকে। স্বল্প প্রস্থের প্রায় ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের গ্রামটির দুটি পাড়ার একটির নামকরণ করা হয়েছে রাজাপাড়া। এ পাড়ার কাউকে ভিক্ষা করা চলবে না। কেন? অপবাদ ঘোচাতে হবে যে!
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম সাহেবপুর। বর্তমানে গ্রামটিতে ভোটার সংখ্যা ১১৭৫। এর মধ্যে অর্ধেকের ৩০জন বেশি ভোটার নারি। বাকিটা পুরুষ। আর পরিবার? এ সংখ্যা ৩৯৭। গ্রামের এক প্রান্তে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে ছেলেরা সাহেব, মেয়েরা হবে মেম। উন্নয়নকামী প্রবীণদের এ স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। কিন্তু না, তেমনটি হবে বলেও আশা করতে পারছেন না কেউ। কেন? কারণ, বিদ্যালয়ে লেখাপড়া হয় না বললেই চলে। হবে কীভাবে? ৪ শিক্ষকের অধিকাংশই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এ অভিযোগ যেমন গ্রামের বড়দের, তেমনই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও। গত ৬ ডিসেম্বর সাহেবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে এক শিক্ষকের দেখা মেলে। প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির হার বেশি হলেও খাতায় প্রায় শতভাগ উপস্থিতির স্বাক্ষর। ইংরেজি শিক্ষকের অবশ্য কিছুটা হলেও বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে লেখাপড়া শেখানোর সুনাম করেছে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশ। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট শিক্ষাথীর সংখ্যা আড়াইশ। শিক্ষার্থীদেরও স্বপ্ন তারা লেখাপড়া শিখে গ্রামের পুরনো তকমা মুছবে। কী সেই তকমা?
গ্রামের নাম সাহেবপুর হলেও গ্রামটির অধিকাংশই ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নিয়োজিত’ মর্মে কয়েক বছর আগে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বলা হয়, বাড়ি পাকা, রঙিন টিভি। বিজলিবাতিও শোভা পায় সন্ধ্যা সাঝে। সকালে পরিবারের নারী-পুরুষেরা বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। সচিত্র এ প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক বছর পর গত রোববার বিকেলে গ্রামে গেলে তেমন কেউই ভিক্ষাবৃত্তির কথা স্বীকার করেননি। অধিকাংশই বলেছেন, এক সময় ছিলো। এখন নেই। বদলে গেছে গ্রামের চিত্র। আগে ছেলে-মেয়েদের মাঠে কাজে পাঠানো দূরের কথা তাদের ভবিষ্যত নিয়েও তেমন মাথাব্যাথা ছিলো না অনেকের। ভিক্ষুকদের গ্রাম বলে এলাকায় পরিচিতি পাওয়ার বহু পরে অবশ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তথ্যবহুল সচিত্র প্রতিবেদন। তখনই টনক নড়ে গ্রামের নবীন-প্রবীণদের। তাদের মধ্যে কাজ করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অনেকেই। সেই স্বপ্নেরই অংশ, গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পড়ে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা একদিন সাহেব হবে। কিন্তু হলো কই? এখনও হতাশা। তবে আশা ছাড়তে নারাজ গ্রামের সচেতনেরা।
গ্রামবাসী অনেকটাই বদলে গেছে। রাজনৈতিকভাবেই সচেতন। রাস্তার দু ধারে গড়ে তোলা ঘরবাড়ির লম্বা গ্রামটিতে রয়েছে প্রায় ডজনখানেক দোকান। প্রতিটি দোকানেই রয়েছে মাচা। চা দোকান মানেই টিভির রমরমা। যেখানে সেখানে রাজনৈতিক আলোচনায় কিছুটা ভাটা থাকলেও মাচাওয়ালা দোকানের সামনে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নবীন-প্রবীনদের মাঝে যেন ফুটছে কথার খই। আর ধর্ম? সাহেবপুরে রয়েছে তিনটি জামে মসজিদ। গ্রামের বসতি ও রাজাপাড়ার নারী-পুরুষের অধিকাংশেরই দাবি, এখন আর গ্রামের তেমন কেউ ভিক্ষাবৃত্তিতে নেই। পুরুষরাই শুধু পরিশ্রম করে না, নারীরাও হয়ে উঠেছেন পরিশ্রমী। বুঝে গেছেন পরিশ্রমই সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। অধিকাংশই পানবরজ করে ভাগ্যের চাকা ঘোরাচ্ছেন। প্রবীণদের কয়েকজন অবশ্য এখনও ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে রাস্তায় বের হন। এদেরই একজন রহিম বকস, দুটি বাড়ি। তার বাড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে কথা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, মাঝে মাঝে পকেট খরচার জন্য যাই।