সচেতনতার আলো ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে

সীমান্তবাসীর মধ্যে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে পারলে চোরাচালান বহুলাংশে হ্রাস পাবে। পড়শি দেশের সীমান্তরক্ষীদের গুলিতে ওইভাবে হারাতে হবে না প্রাণ, দেশের মর্যাদাও ওইভাবে ধুলণ্ঠিত হবে না। মূলত এ তাগিদ থেকেই এক বছরের অধিক সময় ধরে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহস্থ ৬ বিজিবির বিওপি কমান্ডাররা শুক্রবার জুম্মার নামাজের খুতবার আগে, জনসমাগমস্থলে, স্কুল ও হাট-বাজারে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করেন। ৬ বিজিবির পরিচালক লে.কর্নেল মনিরুজ্জামানের বিশেষ তাগিদে চলমান সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অনেকটা ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। ফলে অন্যান্য সীমান্তেও অভিন্ন কর্মসূচি পালন জোরদার করা হচ্ছে। নিষ্ঠা অবশ্যই এনে দেবে সফলতা।
চোরাচালান দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেয়। চোরাচালান রাখা মানে দেশের ভাড়ারে ফুটো রেখে তা ভর্তি করার চেষ্টা। যদিও বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লে পড়শি দেশ এগিয়ে গেলে চোরাচালান শতভাগ বন্ধ রাখা অসম্ভব প্রায়। তারপর যদি সীমান্ত প্রহরায় অপ্রতুলতা থাকে তা হলে তো পড়শি দেশের সীমান্তরক্ষীদের ইচ্ছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে কোন দ্রব্য পাচার হবে, কোনটি পাচার হবে না। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, আমাদের পড়শি দেশ অনেক বড় দেশ। সীমান্তে গড়ে তুলেছে তারকাঁটার বেড়া। সীমান্ত ফাঁড়িই শুধু নয় প্রহরীর সংখ্যাও আমাদের তুলনায় বহুগুণ বেশি। এরপরও আমাদের দেশের সীমান্তরক্ষীদের দায়িত্বশীলতা, চোরাচালান রোধে তৎপরতার পাশাপাশি সীমান্তবাসীর মাঝে সচেতনতার আলো ছড়ানোর কর্মসূচি পালন প্রশংসার দাবি রাখে বটে।
চোরাচালান কোনোভাবেই মেনে নেয়া উচিত নয়। গরু বা গো মাংসের চাহিদা মেটাতে শিথিলতার সুযোগে মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির বারুদে ভরে যাওয়া অসম্ভব নয়। হচ্ছেও। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের সিংনগরের এক মাদক চোরাকারবারী আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়লে তার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার হয়ে আসে পড়শি দেশ থেকে। এর কুফল জাতি তথা দেশবাসীকেই ভোগ করতে হয়। আর গরু? পড়শি দেশে উদ্বৃত্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও বৈধভাবে গরু আমদানিতে বাধা মূলত ধর্মীয় অনুভূতি। ফলে অঘোষিতভাবে গরু পাচার ওরা ওদের তাগিদেই ঠেলে দেবে। এজন্য একটু ধৈর্য ধরতে হবে। যদিও অর্থলিপ্সুতা ধৈর্যের বাঁধটা বালুর বাঁধের মতোই করে তোলে। সীমান্ত টপকাতে গিয়ে অনেকেরই প্রাণ ঝরে। দেশের মর্যাদায় কলঙ্কের দাগ পড়ে। তাছাড়া গরু পাচার করে আনার কথা বলে কেউ কেউ বিশেষ সহানুভূতি নিয়ে পাচার করে আনে মাদকসহ দেশের ক্ষতিকর দ্রব্য।
চোরাচালানীরা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। চোরাচালান রুখতে হবে। যেহেতু আমাদের সীমান্ত প্রহরীতে অপ্রতুলতা, কাঁটাতারের বেড়া ও সীমান্তে সড়ক নির্মাণের ভাড়ারে টান। কপালে ভাঁজ। ফলে সীমান্তবাসীদেরই দায়িত্বশীল হতে হবে। দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা বাড়াতে পারলে অবশ্য দেশ তথা জাতি উপকৃত হবে। স্বনির্ভরতা অর্জনে যেমন দরকার ভাড়ারের ফুটো বন্ধ তথা চোরাচালান শূন্যের কোঠায় নেয়া, তেমনই গড়ে তোলা দরকার কর্মসংস্থান। বিজিবির ছড়ানো সচেতনতার আলো সীমান্তবাসীকে করে তুলুক আলোকিত, দেশ হোক সর্বক্ষেত্রে সাবলম্বী। নারী ও শিশু পাচার রোধে ঘরে-বাইরে সকলেই হোক সোচ্চার। দূর হোক লোভের টোপে প্রতারণা। এ জন্যই দরকার সচেতনতা।