স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনস্থলে উত্তেজনা থাকলেও উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তাপের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে। কয়েক দফা দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজেন দোকানীসহ সাধারণ পথচারী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পথে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও পড়তে হয় উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিলের বাড়িতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে ভাঙচুর করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের বাতিলকৃত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ও সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক আশাদুজ্জামান কবিরের বাড়ি। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শেকরাতলার মোড়ে হামলাসহ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিক্ষিপ্ত ঘটনায় আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮ জন। একজন বাদে বাকি ৭ জন বাড়ি ফিরেছে। আহতদের মধ্যে একজনকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় নেয়া হয়েছে। পরে তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় টাউন ফুটবল মাঠে। বেলা ১১টা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সম্মেলনে যোগ দেন। জেলা শহরে যেমন ফুটে ওঠে উৎসবের আমেজ, তেমনই সম্মেলন ঘিরে ক্রমশ ফুটে উঠতে থাকে শঙ্কা। উত্তেজনাও দানা বাঁধে। সম্মেলনের প্যান্ডেল কানাকানায় ভরে ওঠে। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে জেলা শহর। অপরদিকে সম্মেলনের অতিথিবৃন্দ চুয়াডাঙ্গা সার্কিট হাউসে পৌঁছান। দুপুর পৌনে ১টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে সম্মেলনস্থলে নেয়ার প্রস্তুতি চলতে থাকে। বেশ কিছু নেতাকর্মী মোটরসাইকেলসহ গাড়ি নিয়ে সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে কিছু নেতাকর্মী বাধার মুখে পড়েন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনস্থলে নেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এরই কিছুক্ষণের মাথায় কোর্টপাড়ার ভি.জে স্কুলমাঠ (চাঁনমারি মাঠ) থেকে একটি অংশ মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়। এ মিছিলটি শহীদ আবুল কাশেম সড়ক হয়ে পৌরসভার নিকট পৌছুতেই বাধার মুখে পড়ে। বাধাদানকারীদের কেউ কেউ বলতে থাকে, সার্কিট হাউজে বাধা দিলি, দেখি তোরা সম্মেলনে কেমনে ঢুকিস। বাধাপ্রাপ্ত হলেও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হতে থাকে কয়েকবার। পৌরসভা মোড়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। বড় বাজার এলাকাতেও হয় একটি। এদিকে ফেরিঘাট সড়কস্থ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিলের বাসায় নিক্ষেপ করা হয় বোমা। বোমাটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। দেয়ালে বোমার দাগ লেগে থাকে। এসময় চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পুরাতন গলিসহ ফেরিঘাট রোড ও শহীদ আবুল কাশেম সড়কের দু ধারের দোকানপাট যেমন বন্ধ হয়ে যায়, তেমনই পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ছোটাছুটি করতে থাকে সকলে।
বিকেলে অবশ্য পরিস্থিতি বেশ শান্ত হয়ে আসে। শহর ফিরে পায় প্রাণচাঞ্চল্য। সন্ধ্যা হতে না হতে আবারও ছড়ায় উত্তেজনা। সন্ধ্যায় উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে শেকরাতলা মোড়ে। বেশ কয়েকটি বোমা-ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় পথচারী মিলন ওরফে মিরন (২৬)। সে জিনতলা মল্লিকপাড়ার মেহেদী হাসানের ছেলে। মিরনকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। তার শয্যাপাশে থাকা লোকজন বলেছেন, সে বাসের হেলপার। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলো। এ সময় মিরন বোমাঘাতে আহত হয়েছে।
বোমা হামলায় একজন আহত হয়েছে খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা নতুন রূপ নেয়। মোটরসাইকেল সহকারে একটি অংশ শেকরাতলা মোড় হয়ে যুবলীগের সাবেক যুগ্মআহ্বায়ক আশাদুজ্জামান কবিরের বাড়ির পাশ দিকে পৌরসভার দিকে রওনা হয়। এ সময় ঘটে একটি ককটেল বিস্ফোরণ। মোটরসাইকেলের সকলে থেমে কবিরের বাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। অভিযোগ, মোটরসাইকেল শোভযাত্রা লক্ষ্য করে কবিরের বাড়ির ভেতর থেকে বোমা মারা হয়েছে। আহত হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাদ্দাম হোসেন, অয়ন জোয়ার্দ্দার, টিটোন। এরাও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। এদের অভিযোগ আজিম ওই কবিরের বাড়ির ছাদ থেকে বোমা নিক্ষেপ করে। এ অভিযোগে তাকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়েছে। সেও আহতদের একজন। আজিম চুয়াডাঙ্গা জিনতলা মল্লিকপাড়ার আছের আলীর ছেলে। পুলিশ অবশ্য বলেছে, আজিম আহত হওয়ায় তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করিয়েছি।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল প্রশ্ন তুলে বলেছেন, আমার বাড়ি কেন বোমা হামলা? জিপু বাহিনী আমার বাড়িতে কেন বোমা হামলা চালিয়েছে তার জবাব কি পুলিশ দেবে? আমি যখন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আপ্যায়ন নিয়ে ব্যস্ত তখন জিপু গ্যাং আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে তটস্থ করেছে গোটা এলাকা। এর বিচার হওয়া উচিত নয়?
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের সদ্য বাতিলকৃত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, সাবেক জেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক চিৎলা ইউপি চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক জেলা যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক আসাদুজ্জামান কবীর, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম পারভেজ সজল এবং পৌর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি হাসানসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে দলের ভেতর ঘাপটি মারা কুচক্রি সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যাপক ভাঙচুরসহ বোমা হামলা চালায়। সেইসাথে তাদের পরিবারের মানুষজন তথা নারী ও শিশুদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য কমিটি প্রাপ্ত হবার পর একই দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের দুর্দিনের কাণ্ডারী ত্যাগী এই নেতাদের বাড়ীঘর ভাঙচুর ও পরিবারের মানুষদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।