নেশায় নিভু নিভু সেই টুকু চৌধুরীর বংশধর : অপুর আকুতি- এবার সুস্থ হলে আর ফিরবো না নেশার আখড়ায়

কামরুজ্জামান বেল্টু: নেশার কালোথাবা নিভু নিভু করে তুলেছে চুয়াডাঙ্গা মুক্তিপাড়ার টুকু চৌধুরীর বংশধর, তার বংশের প্রজন্ম প্রদীপ। এক সময়ের শুধু সম্ভ্রান্তই নয়, আভিজাত্যে পরিপূর্ণ ছিলো টুকু চৌধুরীর পরিবার। এই পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিলো লাল্টু চৌধুরী। যার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে জেলহাজতে। লাল্টু মুক্ত হলেই নেশায় বুদ হয়ে থাকতো। রিকশার ওপরে চেয়ার ভিড়িয়ে তাতে বসতো এমনভাবে, যেন রাজা বসেছে রাজ সিংহাসনে। সেই লাল্টু চৌধুরীর ছেলে অপু চৌধুরীও নেশার কবলে পড়ে অসহনীয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে এখন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। বাঁচার আকুতি জানিয়ে সে বলেছে, আমাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে দাও, আমি আর কোনোদিন ঘুমের পিল নেবো না, নেবো না নেশার ইনজেকশন।
টুকু চৌধুরী ছিলেন কেরুজ কমর্কতা। তার একমাত্র ছেলে লাল্টু চৌধুরী ছোটবেলায় অসম্ভব মেধার অধিকারী ছিলো। ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও একমাত্র ছেলে হওয়ায় তাকে পিতা-মাতার কাছে থেকেই পড়তে হয়েছে। আদরে আদরে যা হবার তাই হয় উঠতি বয়সে। পিতার মৃত্যু তাকে আরো বিপথগামী করে তোলে। মাদক তাকে কুরে কুরে খেতে থাকে। মাদকসহ নানা কারণেই তাকে দফায় দফায় গ্রেফতার হয়ে থাকতে হয়েছে জেলহাজতে। যখনই মুক্ত হয়েছে তখনই তাকে মাদকের আখাড়াতে দেখা গেছে। অবশ্য বিয়েও করেছে দুটো। প্রথম স্ত্রীরই সন্তান আরিফুর রহমান অপু। বয়স এখন ২৯ বছর।
অপু বলেছে, ‘শুনেছি দাদা টুকু চৌধুরী কাটিয়েছেন বিলাসী জীবন। তারই একমাত্র ছেলে লাল্টু চৌধুরীর প্রথম পক্ষের স্ত্রী সালমা খাতুনের দু ছেলের মধ্যে বড় আমি। ছোট বেলাতেই পিতাকে পাইনি। বয়স যখন ৫/৬ বছর তখন শুনেছি ঢাকার কেরানীগঞ্জে মাদকচক্রের আভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে তাকে খুন হতে হয়েছে। সেখানেই দাফন করা হয় তাকে। মা সালমা খাতুন দ্বিতীয় বিয়ে করে। নতুন সংসার পাতি আমি? ছোট বেলায় প্রথম দিকে ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমোতাম। এরপর ধরলাম গাঁজা। তারপর যখন যা পাই তাই দিয়ে নেশা করতে শুরু করি। কিছুটা বড় হওয়ার পর ঢাকায় গিয়ে টাউন সার্ভিস বাসের হেলপারি করার পাশাপাশি শেরেবাংলার গ্যাঙের সাথে ঘুরি। টাকা নিয়ে নেশার ইনজেকশন শরীরে নিতে থাকি। মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মারা গেলে দুবাই যাই। সেখানেই আছি। মাঝে মাঝে মায়ের পাঠানো টাকা নিয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হবো, সুস্থ হয়ে মাদক নেবো না ভাবি। কিন্তু হয় না। পায়ে পচন ধরেছে। অসহনীয় যন্ত্রণা। ঢাকায় যাদের সাথে ঘুরতাম তারাও দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে লাগলো। ঢাকার হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে চাইলেও তারা নিলো না। অগত্যা গত ৭দিন আগে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা নিচ্ছি।’
বিয়ে সাদী করোনি? অপু চৌধুরী খানেকক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘করেছিলাম। মা ভেবেছিলো বিয়ে করলে আমি ভালো হয়ে যাবো। ঘটককে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ঝিনাইদহের গোপালপুর গ্রামের লিপি নামের এক তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রীর সাথে বিয়ে দিলো। নেশাখোরের সংসারে কি থাকে? বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় চলে গেলো। একা হয়ে গেলাম আমি।’ আর কেউ নেই? আছে, ছোট ভাই। দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ায় থাকে। বিয়ে করেছে। সংসার নিয়ে ভালোই আছে। আমি কি সুস্থ হবো? শুনেছি নেশাখোরদের এসব ঘা নাকি সারে না? আমার কি ভালো থাকা হবে? অপু চৌধুরীর এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? সমাজ নাকি তার বংশেরই কেউ?