যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জঙ্গিবাদ নিয়ে চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ দ্বৈত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মনে করে ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্যা হিন্দু। গতকাল বুধবার হিন্দু পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে এমন মূল্যায়ন ওঠে আসে। এতে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির আগে বিদেশি নাগরিক, ব্লগার, প্রকাশক, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের হত্যার ঘটনা বেড়ে যায়। এসব ঘটনা নিছক কাকতালীয় নাকি ফাঁসি কার্যকর করার সাথে সম্পর্কিত এ নিয়ে জল্পনার শেষ নেই।
অন্যদিকে, ফাঁসি কার্যকর করার ফলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে তার কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও দেশে-বিদেশে আলোচনা হচ্ছে। হিন্দুর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে জঘন্য অপরাধের দায়ে দুজনকে শাস্তি দেয়ার পর যুগপৎ সাধুবাদ ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর শেখ হাসিনার সরকার বিচার দেখতে চেয়েছেন বিধায় যুদ্ধাপরাধের বিচার হচ্ছে। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের জটিল ইতিহাসের কারণে এই অপরাধ অনিষ্পন্ন ছিলো। এ অমীমাংসার সমস্যা এখন বহাল এ কারণে যে, মৌলবাদীরা এমনকি পাকিস্তান সরকার বিচার ও শাস্তির পর তার বিরোধিতা করছে।
অন্যদিকে, ধর্মনিরপেক্ষ সুশীল সমাজ বিচার চালিয়ে নিতে এবং যুদ্ধাপরাধীদের সাজা দিতে সরকারের ওপর চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এই অসঙ্গতি পুনরায় দেখা গেলো যখন দু দণ্ডিত আসামি জামায়াতে ইসলামীর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করা হলো।
সম্পাদকীয় অভিমতে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে যে প্রতিশ্রুত তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কম। তবে বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া নিয়ে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নৈতিক অবস্থান থেকে ফাঁসি দেয়া বাংলাদেশ সরকারের জঙ্গিবাদ বিরোধী লড়াইকে দুর্বল করেছে। এর ফলে বিচার প্রক্রিয়াকে দেশের আইনের ওপর ভিত্তি করে হওয়া ন্যায়বিচারে সাজার চেয়ে প্রতিশোধ হিসেবে রঙ ছড়িয়েছে বেশি।
অন্যদিকে, এই বিচার এমন এক সময়ে হয়েছে যখন বাংলাদেশ ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। শেখ হাসিনার সরকার যদি এটা মনে করে থাকে যে, এই ফাঁসি বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের রাজনীতিকে দুর্বল করবে, তবে এটা দীর্ঘমেয়াদে ভুল প্রমাণিত হবে। এর ফলে তিক্ত মনোভাবাপন্ন বিরোধীদের কাছ থেকে অনুসারীদের নিয়োগ করতে সুযোগ পেতে পারে জঙ্গি গ্রুপগুলো।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ থেকে দেখা যায়, এটা ইতোমধ্যেই ঘটে চলেছে। সরকারের কঠোর অবস্থান ও ফাঁসিতে ঝুলানোর পরও দেশের বৃহত্তম ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামী এখনো সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী দল। তারা ‘বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা’ করে তার ‘প্রতিশোধ’ নিতে ব্রত নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়া শুরুর পর থেকে ধর্ম নিরপেক্ষ লেখক ও প্রকাশকদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়া কাকতালীয় ঘটনা নাও হতে পারে। অন্য কথায় সরকারের অবস্থান অতীতের বিচারের মাধ্যমে ক্ষত শুকানোর চেয়ে বর্তমানের অসঙ্গতিই বেশি স্পষ্ট করে। ঢাকার সামনে এখন বিরাট এক চ্যালেঞ্জ। অপরাধীদের বিচার করে যাবজ্জীবন সাজার মাধ্যমে ওই মর্মান্তিক ঘটনার মুক্তিযুদ্ধের ইতি টানতে পারে। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের ওপর নির্ভর করলে স্বাগত জানানোর মতো যে প্রক্রিয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছে সরকার, সেই উদ্যোগকে নীরস করে ফেলতে পারে।