দোয়া পড়ছিলেন দুজনই : ফাঁসির মঞ্চে তারা ছিলেন নির্বিকার!

স্টাফ রিপোর্টার: ফাঁসির মঞ্চে নির্বিকার ছিলেন জামায়াতের জেনারেল সেক্রেটারি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তবে চার জল্লাদ তাদের কনডেম সেল থেকে মঞ্চে নেয়ার সময় তারা দুজনই শব্দ করে দোয়া পড়েছেন, ছিলেন পুরোপুরি স্বাভাবিক। এ তথ্য জানিয়েছেন ফাঁসির মঞ্চে উপস্থিত একজন কারা কর্মকর্তা। তিনি এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডিত জামায়াতের দু সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ও উপস্থিত ছিলেন। এই কারা কর্মকর্তা বলেন, কাদের মোল্লাকে ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার সময় জল্লাদদের রীতিমতো টানা-হেঁচড়া করতে হয়েছিলো। আর কামারুজ্জামান চিত্কার করে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। একই কথা জানিয়েছেন ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম। তিনি বলেন, ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় দুজনই ছিলেন নীরব। একই মঞ্চে পাশাপাশি তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তারা কোনো ‘রিঅ্যাক্ট’ করেননি।
কারাসূত্রে জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রজনীগন্ধা সেলে আগে থেকে ছিলেন আলী আহসান মুজাহিদ। আর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে কাশিমপুর-১ কারাগার থেকে ঢাকা কারাগারে আনা হয় গত ১৫ নভেম্বর রাতে। পাশাপাশি দু কক্ষে তাদের রাখা হয়েছিলো। গত ১৯ নভেম্বর রাতে রায় পড়ে শোনানোর সময়ও তারা প্রতিক্রিয়া দেখাননি। ক্ষমা প্রার্থনার প্রসঙ্গ নিয়ে গত শুক্রবার কারা কর্মকর্তারা তিন দফায় তাদের সাথে কথা বলেন। সর্বশেষ গত শনিবার সকাল ১০টায় কারাগারে ঢোকেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট। কথা বলার এক পর্যায়ে দুজনই ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করতে রাজি হন। এরপর সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ইংরেজিতে (চার পাতা) এবং আলী আহসান মুজাহিদ বাংলায় (এক পাতা) রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে আবেদনপত্র লেখেন। কারা হাসপাতালের একজন চিকিত্সক বলেন, প্রতিদিন দু দফায় তিনি দুজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা (চেকআপ) করেছেন। এ সময় তারা দু একটি কথাও বলেছেন। তবে রিভিউ খারিজ হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা যায়। শেষ দুদিন তারা চেকআপ নিয়ে কোনো কথাই বলেননি।
দ্রুত বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট, কারা কর্মকর্তা জানান, রায় ঘোষণার পরই কারা কর্তৃপক্ষ ফাঁসি প্রদানের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। শনিবার দুপুর আড়াইটায় ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন পাঠানো থেকে রাত সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কেউ নিশ্চিত ছিলেন না যে রাতেই ফাঁসি কার্যকর হবে। তবে পৌনে আটটার দিকে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সন্ধ্যা সাতটা ৫৫ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল ফজলুল কবির। এরপরই কারা কর্তৃপক্ষ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদের স্বজনদের দেখা করার জন্য খবর পাঠায়। রাত ৯টায় কারাগারে আসেন সালাহউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। আর রাত ৯টা ২০ মিনিটে আসেন মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রথমে ফাঁসির সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো ১২টা ০১ মিনিট। কিন্তু স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছিলো, তা ঠিক রাখা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ফাঁসি মঞ্চে যাওয়ার আগের তিন ঘণ্টা, ওই কারা কর্মকর্তা বলেন, শনিবার রাত ৮টার দিকে শেষ খাবার খান সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদ। স্বজনদের দেখা শেষে সাড়ে ১১টার দিকে দুজন গোসল করেন। এরপর নামাজ পড়েন। নামাজ শেষ হবার পর কারা মসজিদের ইমাম তওবা পড়ান। এরপরই জল্লাদরা আসেন। কনডেম সেলের মধ্যেই তাদের দু হাত পেছনে বেঁধে দেয়া হয়, পড়ানো হয় কালো রঙের জমটুপি। রাত ১২টা ৫০ মিনিটে চার জল্লাদ দুজনকে ধরে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চে। দুজনকে একই সময় তোলা হয় ফাঁসির পাটাতনে। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে কার্যকর করা হয় ফাঁসি। এরপর ফাঁসির দড়িতে ১৫ মিনিট ঝুলে থাকার পর নামানো হয় তাদের মৃতদেহ। পরে ময়নাতদন্ত ও গোসল শেষে পড়ানো হয় কাফনের কাপড়। এরপর চা পাতা দিয়ে মৃতদেহ তোলা হয় কফিনে। রাত ২টা ৫৫ মিনিটে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃতদেহ চট্টগ্রাম ও আলী আহসান মুজাহিদের মৃতদেহ নিয়ে ফরিদপুরের পথে রওনা হয় দুটি অ্যাম্বুলেন্স। এ সময় নিরাপত্তায় ছিলো ৱ্যাব ও পুলিশের গাড়িবহর।