মিয়ানমারে বিপুল জয় পেল সু চির দল

মাথাভাঙ্গা মনিটর: মিয়ানমারের নির্বাচনের সর্বশেষ ঘোষিত ফল থেকে স্পষ্ট যে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দেশটির নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। গত রোববার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পাঁচ দিন পর পার্লামেন্টের ৮০ শতাংশ আসনের  ফল ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা গেছে, পার্লামেন্টের দুই কক্ষে সর্বমোট ৩৬৯টি আসন পেয়ে এগিয়ে রয়েছে সু চির দল। ঠিক পাঁচ বছর আগে যে দিনটিতে অং সান সু চি তার গৃহবন্দী দশা থেকে মুক্তি পান, সে দিনটিতেই দলের এ বিপুল বিজয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করলো নির্বাচন কমিশন। কিন্তু মিয়ানমারের রাষ্ট্র ক্ষমতায় গত ৫০ বছর ধরে সামরিক বাহিনীর যে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, সেটা তারা কতোটা ছাড়বে এবং আং সান সু চির দল প্রকৃত ক্ষমতা আসলে কতোটা পাবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। তবে এ জয় তার অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মিয়ানমারের পার্লামেন্ট উচ্চকক্ষ হাউস অফ ন্যাশনালিটিজ (আমিওতা হুলাত্ত) এবং নিম্নকক্ষ হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস (পিথু হুলাত্ত), এ দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে হাউস অফ ন্যাশনালিটিজে ২২৪টি আসন যার মধ্যে ২৫ শতাংশ বা ৫৬টি আসনই সেনা প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি ১৬৮টি আসনে নির্বাচন হয়েছে। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসে আসন সংখ্যা ৪৪০। এখানেও ২৫ শতাংশ বা ১১০টি আসন সেনা প্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত। নির্বাচন হয়েছে ৩৩০টি আসনে। উচ্চকক্ষের ১৬৮টি আসনের মধ্যে ১৪টির ফল ঘোষণা করা হয়নি। ঘোষিত আসনের মধ্যে ১৩১টি এনএলডি, সেনা সমর্থিত ইউনাইটেড সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) পেয়েছে ১২টি আসন এবং অন্যান্য দল পেয়েছে ১১টি আসন। নিম্নকক্ষের ৩৩০টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসনের ফল ঘোষণা বাকি আছে। ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, সু চির এনএলডি ২৩৮টি, ইউএসডিপি ২৮টি এবং অন্যান্য দল পেয়েছে ৩২টি আসন। ধারণা করা হচ্ছে, সবার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে অর্ধ-শতাব্দী কাল ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চলে আসা সামরিক শাসনের অবসান ঘটবে। সংবাদদাতারা বলছেন, এতো বিপুল ভোটে জয়লাভের পরেও এনএলডি তার মতো করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না। সামরিক সরকারের তৈরি সংবিধান অনুযায়ী সু চির সন্তানরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। কিন্তু এনএলডি ঘোষণা করেছে, প্রেসিডেন্টের মাথার ওপর থাকবেন দলনেত্রী। অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট এ একটি কথাই এখন ভেসে বেড়াচ্ছে মিয়ানমারের আনাচে কানাচে। সাংবিধানিক পরিসরের বাইরেই সু চিকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে চাইছেন সাধারণ মানুষ। সেই বিপুল জনমতই জন্ম দিয়েছে অ্যাবাভ দ্য প্রেসিডেন্ট এর। সু চিও নির্বাচনের আগে এবং পরে বলেছেন, দলের প্রধান থেকেই তিনি দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবেন।

মিয়ানমারের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে পারবে না এনএলডি। কেনোনা সংসদের ২৫ শতাংশ আসন বরাদ্দ রাখা হয়েছে সামরিক বাহিনীর জন্য। ফলে সংবিধানে কোনো ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হলে তারা চাইলে ভেটো দিতে পারবে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং সীমান্ত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় থাকবে সেনাবাহিনীর হাতে। এমনকি সেনা প্রধান যে কোনো সময়ে দেশের যে কোনো অঞ্চলে এমনকি সারাদেশেও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন।