কেরুজ চিনিকলের ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মরসুম শুরু ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও লাভজনক করণে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি

???????????????????????????????

দর্শনা অফিস: কেরুজ চিনিকলের ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মরসুম শুরু হচ্ছে ডিসেম্বরে। উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্ধারণ না হলেও ডিসেম্বরের প্রথম দিকেই শুরু হতে পারে আখ মাড়াই কার্যক্রম। আগামী মাড়াই মরসুম সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি লাভজনক করণে মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গ্রহণ করেছে নানামুখি কার্যক্রম। এবারো কয়েকটি গোডাউন বোঝাই কয়েক মরসুমের অবিক্রিত চিনির বোঝা মাথায় নিয়েই মিলের মাড়াই যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি চলছে। বরাবরের মতো আগামী মরসুমে যাতে লোকসানের হিসাব না কষতে হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। ২০১৪-১৫ আখ মাড়াই মরসুমে ৯৫ কার্যদিবসে ৯৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার ৫শ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৯৬ কার্যদিবসে ৯৬ হাজার ৬শ ৬৭ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়। চিনি উৎপাদনের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন। ফলে ওই মরসুমে মোটা অঙ্কের লোকসান গুণতে হয়েছে মিল কর্তৃপক্ষকে।

জানা গেছে, ২০১৫-১৬ আখ মাড়াই মরসুমে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ৭৮ বছর বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ মিলটি করপোরেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রাণপ্রণ চেষ্টা চালাচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। প্রায় সাড়ে ৩ মাস মাড়াই দিবসে ১ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ মরসুমে মিলের নিজস্ব ১২ হাজার ৩শ একর জমিসহ ৮ হাজার ৮শ ৭০ একর জমিতে আখ রয়েছে। যা মাড়াই করলে ৯০ মাড়াই দিবসে ৯০ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা সম্ভব হতে পারে। এতে চিনি উৎপাদন হতে পারে ৬ হাজার মেট্রিক টন। বয়সের ভারে জরাজীর্ণ মিলটির চিনি আহরণের গড় হার ৭ দশমিক নির্ধারণ করা হলেও তা হয়তো সম্ভব হবে না। তবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম আরশাদ হোসেন বলেছেন, চিনি আহরণের হার আখ মাড়াইয়ের পরিমাণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও লাভজনক করণের ক্ষেত্রে এবার নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মরসুমের ব্যাপারে গ্রহণ করা হয়েছে আগাম প্রস্তুতি। আখচাষে কৃষকদের করা হচ্ছে উদ্বুদ্ধ। ফলে কৃষকরা এখন আখ রোপণের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে মিলের নিজস্ব ১ হাজার ২শ ৮৫ একর জমিসহ ১২ হাজার ৫শ একর জমিতে আখ রোপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা হলেও ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মরসুমে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রচুর পরিমাণে বাড়বে। এবিএম আরশাদ আলী আরো বলেছেন, মিলের অবিক্রিত চিনি বিক্রির লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপ কাজে লাগানো হয়েছে। প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ব্যাপক সাড়া মিলেছে।

জানা গেছে, ১৮৪৭ সালে মি. রাবর্ড রাসেল কেরুজ অংশিদারত্বের ভিত্তিতে ওই মদ কারখানার সাথে যুক্ত হন এবং তা কিনে নেন। উত্তর ভারতের রোজাতে অবস্থাকালীন ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় কারখানাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে তা পুনর্নির্মাণ করে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি গঠন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর এ কারখানাটি শত্রু সম্পত্তিতে পরিণত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। তখন থেকেই আজ পর্যন্ত কেরুজ চিনিকলটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। ৭৭ বছর বয়সি পুরোনে এ মিলটির বর্তমান অবস্থা একেবারেই নাজুক। সরকার এ মিল থেকে প্রতি বছর শশ কোটি রাজস্ব আদায় করলে আজো লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।