আলমডাঙ্গার জহুরুলনগরের কবিরাজ ফরিদার অভিনব তেলেসমাতি : সর্বস্বান্ত খেজুরতলার রুপালী

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার জহুরুলনগর গ্রামের কবিরাজ ফরিদা খাতুনের অভিনব তেলেসমাতিতে এখন সর্বস্বান্ত পার্শ্ববর্তী খেজুরতলার রুপালী খাতুন। নিজের বশে থাকা জিনের মাধ্যমে সোনার গয়না দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কবিরাজ ফরিদা খাতুন রুপালীর নিকট থেকে ২লাখ ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা ফেরত না দিয়ে কবিরাজ ফরিদা ও তার স্বামী এখন নানা ফন্দিফিকির ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রতারিত রূপালী খাতুন থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেছে।

এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, জহুরুলনগর গ্রামের সন্টুর স্ত্রী ফরিদা খাতুন এলাকায় কবিরাজি করেন। তিনি তার নিজের বশে থাকা জিনের বাদশাকে দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন, তিনি নিজে কিছু করেন না। সবই করে জিনের বাদশা এমন বক্তব্য তিনি এলাকায় ছড়িয়ে বেশ আয়েশে কবিরাজি ব্যবসা ফেঁদেছেন বলে গ্রামের অনেকে অভিযোগ করেছেন। কবিরাজি করে কয়েক বছরে তিনি বেশ অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অত্যন্ত গরিব অবস্থা থেকে মাত্র কয়েক বছরেই তিনি বেশ কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। ৮ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছেন বাড়ি। এখন আর ফরিদা কবিরাজের স্বামী মাঠে কাজকর্ম করেন না। বাড়িতে বসে স্ত্রীর ফন্দি ফিকিরে সহযোগিতা করে থাকেন। এরই মাঝে পার্শ্ববর্তী খেজুরতলা গ্রামের শাহজাহানের বিবাহিত মেয়ে রুপালী খাতুন কবিরাজ ফরিদার নিকট চিকিৎসার জন্য যান। রূপালী খাতুনের স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করেন। তিনি শ্বশুর বাড়িতে না থেকে বাপের বাড়িতে থাকেন। তার হাতে বেশ টাকা পয়সা আছে। এমনটা বুঝতে পেরে কবিরাজ ফরিদা রূপালীর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। কয়েক মাস আগে ফরিদা অল্প কিছুদিনের জন্য রূপালীর নিকট মোটা অঙ্কের টাকা ধার চায়। ধার নেয়া টাকা তো পরিশোধ করবেনই উপরন্তু অতিরিক্ত একটি সোনার গয়নাও তাকে দেবেন তিনি। এমন প্রলোভন দেখানোর পাশাপাশি কবিরাজ তার বশে থাকা জিনের বাদশা মারফত কিভাবে সোনার মালিক হয়, সে গল্পও কৌশলে রুপালী খাতুনকে জানিয়ে দেন। লোভের বশবর্তী হয়ে রুপালী খাতুন নিজের গচ্ছিত টাকাসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলে মোট ২ লাখ ২০ হাজার টাকা কবিরাজ ফরিদার হাতে তুলে দেন। কয়েক মাস অতিক্রান্ত হলেও কবিরাজ ফরিদা আর তাকে টাকা ফেরত দেয় না। রুপালী খাতুনের লাগাতার তাগাদার কারণে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা ফেরত দেয় কবিরাজ ফরিদা। বাকি টাকার জন্য বার বার তাগাদা দিলেও কবিরাজ ও তার স্বামী কৌশলের আশ্রয় নেন। নগদ টাকা দিতে পারছে না জানিয়ে ফরিদা কবিরাজ রুপালী খাতুনকে প্রস্তাব দেয় সোনার গহনা দিয়ে টাকা পরিশোধের। রুপালী খাতুনের বাড়ি গিয়ে রাতে কবিরাজ আসন নেন। নতুন হাড়ি নিয়ে সঙ্গোপনে ধ্যান করতে বসেন। পরে রুপালীকে ডেকে বলেন, ৪০ দিন পরে জিনের আছর করা এ হাড়ি খুলবি। তাহলে সোনার অনেক গয়না পাবি। ৪০ দিনের আগে খুললে বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা যাবি। কোনো ডাক্তার বাঁচাতে পারবে না। তারপর থেকে রুপালী খাতুনের শুধুই অপেক্ষার প্রহর গোনা। ৪০ দিন অতিবাহিত হলে রুপালী খাতুন জীনের আছরযুক্ত হাড়ি খুলে তার ভেতরে দেখে একটি এমিটেশনের চেইন, একটি কানের দুল, সিদুরের কৌটা ও নারিকেলের মালা। রুপালী পাওনা টাকা ফেরত চাইলেও ফরিদা কবিরাজ তার টাকা ফেরতের দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি। পরে রুপালী খাতুন স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিকট ফরিদা খাতুনের প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের কাহিনি জানিয়ে বিচার চাইলে কয়েকবার বিচারের তারিখ পরিবর্তন করে করে নেন কবিরাজ ফরিদা খাতুনের স্বামী। পরে আর সালিস বৈঠক সম্ভব হয়নি কবিরাজ ফরিদা খাতুনের স্বামী, স্বামীর আত্মীয়স্বজন এবং ফরিদার কতিপয় দালালের অত্যাচারে। বাধ্য হয়ে রুপালী গত ২ নভেম্বর আলমডাঙ্গা থানায় এ বিষয়ে লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এখন পর্যন্ত কবিরাজ ফরিদা খাতুনকে আটক করা হয়নি।