টানা পঞ্চম সিরিজ জয় : জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিভিন্ন সময়েই বিশ্ব ক্রিকেটের মোড়লরা উপেক্ষা করেছে। নানারকম অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। তবু সঠিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে টাইগাররা যে এগিয়ে গেছে, তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। এখন বিশ্ব ক্রিকেটের যে কোনো শক্তি, বিশেষ করে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশকে উপেক্ষা করতে পারবে এমন দল নেই। বলাই বাহুল্য যে, আজকের এ অবস্থান এমনিতেই তৈরি হয়নি। খেলোয়াড়দের অপরিসীম প্রচেষ্টা, দেশের ক্রিকেট-সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপসহ ইতিবাচক উদ্যোগগুলোর সঠিক বাস্তবায়নের ফলেই আজকের অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এটাই শেষ নয়, আরো গতিশীল ধারায় এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। বারবার বিশ্বের কাছে দেশের সুনামকে আরো উঁচু করে তুলে ধরতে হবে। এবারে ঘরের মাঠে টানা পঞ্চমবারের মতো সিরিজ জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন।
এমনটি বললে হয়তো অত্যুক্তি হবে না যে, এবারের সিরিজ জয়টি যেন শুধু এক আনুষ্ঠানিকতারই নাম। এ সিরিজ জয়ের মধ্যদিয়ে ঘরের মাঠে টানা পঞ্চম সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে টানা পঞ্চমবারের মতো সিরিজ জয় সাধারণ কোনো বিষয় নয়। এ জয়ের মধ্যদিয়ে মূলত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তার অবস্থানই স্পষ্ট করে দিলো। গত বছরের নভেম্বরে শুরু হয়েছিলো এ জিম্বাবুয়েকে দিয়েই। তারপর ক্রিকেটের পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে টাইগাররা পরাজিত করেছে। সে ধারায় আবারো জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করলো।

এবারের সিরিজটির পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয় লক্ষণীয়, দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ইমরুল কায়েস হাফসেঞ্চুরি করলেন, যার সুবাদে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে লড়াই করার পুঁজি সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ দল তাদের করা রানে বিপক্ষ দলকে আটকে দেয়ার সক্ষমতা কতোটা তৈরি করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে আমরা বলতে চাই, এখন বিশ্বের যে কোনো ক্রিকেট দলকেই বাংলাদেশ দলের বিষয়টি মাথায় রেখেই খেলতে হয়। এ দলের আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়ও যদি কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকেন, সেই চাপ সামলে জয়ী হওয়ার সক্ষমতাও আছে। ফলে এ ইতিবাচক বিষয়টিতে আত্মহারা না হয়ে কঠোর অনুশীলন ও একাগ্রতার মধ্যদিয়ে ক্রিকেটের সফলতা অর্জন করতে হবে। বারবার বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। খেলোয়াড়রা আরো বেশি দায়িত্বশীল হয়ে যেন সফলতার চূড়ান্তে পৌঁছুতে পারেন। সার্বিক সহযোগিতা সরকারকে যেমন দিতে হবে, তেমনিভাবে ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্টদের সঠিক তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার সব সময়ই ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া সংশ্লিষ্টরাও তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে বারবার। তদুপরিও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে, যা কাম্য ছিলো না। এমনকি ম্যাচ ফিক্সিঙে জড়িত থাকার মতো ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনিভাবে স্বজনপ্রীতির মতো অভিযোগও উঠেছে। সন্দেহাতীতভাবেই এ বিষয়গুলো ক্রিকেটের অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধক, যা নিরসনে সার্বক্ষণিক নজরদারি আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। জয়ের এ ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আরো এগিয়ে যাক। একই সাথে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আরো বেশি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক, যেন দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়। কেননা এটা মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে ক্রিকেট দলের এখনকার অবস্থান অত্যন্ত দৃঢ়। আর তা বজায় রাখতে সঠিক পদক্ষেপ জরুরি। বোলিং, ব্যাটিং কিংবা সার্বিক অর্থেই ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শরীরী ভাষার যে পেশাদারত্ব এসেছে, তা এ দেশের ক্রিকেটকে আরো বহুদূর এগিয়ে নেবে।