আলমডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস আজ

রহমান মুকুল: আজ ১২ নভেম্বর। আলমডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস। এ দিনে আলমডাঙ্গা শহরে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এতে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হন। আলমডাঙ্গায় শান্তি কমিটির অত্যাচারে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ঈদুল ফিতরের দিন শান্তি কমিটির নেতাদের ধরার পরিকল্পনা নেয়। সেই অনুযায়ি মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

ডেড লাইন ১১ নভেম্বর: পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আলমডাঙ্গা থানার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার কাজী কামাল, মিরপুর থানার মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মারফত আলী, আলমডাঙ্গার কমান্ডার আব্দার রহমান, আলমডাঙ্গা থানা গেরিলা কমান্ডার আ. হান্নানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে আলমডাঙ্গার কাছাকাছি থাকতে শুরু করে। এদের দায়িত্ব ছিলো রেকি করার। ১১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মোল্লা আবুল হোসেন নান্নুর নেতৃত্বে ২২ জনের সাহসী একদল মুক্তিযোদ্ধা ডামোশ গ্রামে অবস্থান নেয়। ২য় দলটি অ্যাড. মোল্লা আব্দুর রশিদ ও জামাল উদ্দিন কমান্ডারের নেতৃত্বে বেলগাছি গ্রামে অবস্থান নেয়। ৩য় দলটি আব্দুল হান্নান ও শফিউর রহমান জোয়ার্দ্দারের নেতৃত্বে বকসিপুর গ্রামে অবস্থান নেয়।

যেকারণে ঈদের নামাজের পূর্বেই যুদ্ধ শুরু হলো: ১২ নভেম্বর ভোরে রেকি করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতি টের পায় আনন্দধাম ব্রিজের নিকটবর্তী অবস্থানে থাকা পাকবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে পেয়ে পাকবাহিনী গুলি ছোড়ে। ফলে পরিকল্পনাবিহীন ঈদের নামাজের পূর্বেই যুদ্ধ শুরু হয়।

ডেড লাইন ১২ নভেম্বর: ভোর থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। আলমডাঙ্গা শহরের নিকটবর্তী ৩টি অবস্থানে থাকা মুক্তিযোদ্ধার দল সর্বাত্মক যুদ্ধে অংশ নেয়। গুলির শব্দ শুনে মুজিব বাহিনী কমান্ডার কাজী কামাল, মারফত আলী তার দল নিয়ে যুদ্ধে যোগদেন। আলমডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পাকসেনা, রাজাকার ও মিলিশিয়া ক্যাম্প লক্ষ্য করে যুদ্ধ শুরু হয়। লালব্রিজে স্থাপিত পাকসেনা ক্যাম্প, রথতলার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ক্যাম্প, বন্ডবিল রেলগেটে স্থাপিত ক্যাম্প, রেলস্টেশন, চারতলায় স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্প, আন্দিয়া বাবুর বাড়িতে স্থাপিত রাজাকার ক্যাম্পে বীর বিক্রমে আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। দুপুর ১২টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা আলমডাঙ্গার বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেন। কিন্তু তখনও আলমডাঙ্গা থানা ছিলো পাকবাহিনীর দখলে। এরই মধ্যে জুম্মার নামাজের আযান শুনে মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ বন্ধ রাখে। নামাজের পর আবারও থানা দখলের জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়। আলমডাঙ্গা থানাতে পাকা বাংকার থাকায় ও চারদিক পাচিঁল থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখলে ব্যর্থ হন। সন্ধ্যা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে। রাতের আঁধার নেমে এলে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধারা আর আক্রমণ করতে পারেনি। এদিন ১২ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধে প্রায় শতাধিক পাকবাহিনীর সদস্য নিহত হয়। শহীদ হন ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা, আহত হন আরও ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা।

দিনটি উপলক্ষে আজ আলমডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড নানা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।