দামুড়হুদা মোক্তারপুরের মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আনছার আলীর মানবেতর জীবনযাপন

বখতিয়ার হোসেন বকুল: গ্রামে গ্রামে কাঁচামাল ফেরি করে বৃদ্ধ বয়সেও এখনও টানতে হচ্ছে সংসারের ঘানি। পরিবার পরিজন নিয়ে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে সেই কবে, কিন্তু সংসার নামের জীবনযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি দামুড়হুদা মোক্তারপুরের মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আনছার আলীর। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কাগজপত্র না থাকায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে তিনি আজ বঞ্চিত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের মৃত মহর আলী শেখের ছেলে আনছার আলী (৬৫)। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে তিনি একই গ্রামের প্রতিবেশী মৃত দোলন বিশ্বাসের ছেলে ইসলামের সাথে ভারতের বিহারে যান এবং বিহারের চাকুলিয়া ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কমান্ডার ওয়াহেদ আলীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করতে যশোর হয়ে বরিশালে যান। যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীনের পর বাড়ি ফেরেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই তার বিয়ে হয় মোক্তারপুর গ্রামের মকছেদ মণ্ডলের মেয়ে সাহার বানুর সাথে। বিয়ের পর থেকে অদ্যবধি তিনি শ্বশুরবাড়ি মোক্তারপুরেই বসবাস করে আসছেন। তিনি ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। তিন ছেলেই দিনমজুর। তারা আলাদা হয়ে এখন যে যার মতো। স্ত্রী সাহার বানু ও নাতনি (মেজ ছেলের মেয়ে) মুন্নিকে (১১) নিয়েই এখন বৃদ্ধ আনছার আলীর সংসার। ভাঙাচোরা একটি ছাপড়া ঘরই তার একমাত্র সম্বল।

মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আনছার আলী তার মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে গেলাম। দেশ স্বাধীন হলো। এরপর আমি এলাকায় ফিরে এলাম। এর কিছুদিনের মধ্যেই আমার বিয়ে হলো। কিছুদিন পর আমার ব্যবহৃত প্যান্ট ধোয়ার সময় প্যান্টের পকেটে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সনদ পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। কি হবে ওই কাগজ এই ভেবে পানিতে ফেলে দিই। মাঠে নেই কোনো জমিজমা। বর্তমানে গ্রাম থেকে কিছু ঝাল-পেঁয়াজ কিনে বাইসাইকেলে করে পার্শবর্তী হাতিভাঙ্গা গ্রামে ফেরি করে বিক্রি করি। কোনো দিন ৬০ থেকে ৭০ টাকা আবার কোনোদিন ৮০ টাকাও লাভ হয়। যা হয় তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি। আগে ছাতিয়ানতলাসহ অন্যান্য গ্রামেও যেতাম। কিন্ত বর্তমানে বয়সের কারণে আর পারি না। তিনি অনেকটা গর্ব করে বলেন, আমার কাগজপত্র নেই ঠিকই, কিন্তু আমি মুক্তিযোদ্ধা। তবে জুড়ানপুর, লক্ষ্মীপুর, হাতিভাঙ্গা, মোক্তারপুরসহ এলাকার সবাই জানে আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আছির উদ্দিন বলেন, আনছার আলী বিহার ট্রেনিং করেছে এটা সত্য। আমার জানা মতে তার বিহারের ট্রেনিং নম্বর কল্যাণ ট্রাস্টে আছে। পরবর্তীতে যখন যাচাই বাছাই হবে তখন তার নাম তালিকাভুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।