স্টাফ রিপোর্টার: মেয়েরাও পারে। বিষয়টি বোঝতে বাংলার মেয়েদের হাটতে হয়েছে বহু পথ। জয় করে দেখাতে হয়েছে, দেখাতে হচ্ছে। দেখানোদেরই কাতারে চুয়াডাঙ্গার সারাবান তাহুরা লরিন। তাকে কৃতিশিক্ষার্থী বলে থেমে থাকার এখন আর সুযোগ নেই, চুয়াডাঙ্গার অনন্য আদর্শের অসম্ভব মেধার অধিকারী এক নক্ষত্র। অবশ্য মেধার চেয়ে লরিনের কাছে গুরুত্ব কঠোর পরিশ্রম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ভর্তির যোগ্যতা পছন্দের বিষয়ে অর্জন করেছেই, একজন মেয়ে হয়ে বুয়েটে এক যুগ পর মেধাতালিকায় সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে চমকে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগী মহলকে। সারাবান তাহুরা লরিন চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের এতিমখানাপাড়ার সুলতান মাহমুদ ও আফরোজা সুলতানার মেয়ে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে জেএসসি, এসএসসি ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে নামে। যেখানেই ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে, সেখানেই চমৎকার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ১৬১তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে ৮ম ও তথ্য প্রযুক্তি অনুষদে ৫ম স্থান অধিকার করেছে। বুয়েটে হয়েছে ২৯৯তম। চুয়াডাঙ্গায় লেখাপড়া করে ১২ বছর আগে তথা ২০০৩ সালে জেসমিন জাহান তিথি বুয়েটে সরাসরি ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে। ওই সময় তিথি ১২তম হয়ে চমক দেখায়। এরপর নিশি সাইমুন ও সোহেলী রহমান বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে ঠিকই, তবে তাদেরকে থাকতে হয়েছে অপেক্ষামান তালিকায়। এবার বুয়েটে মেধা তালিকায় লরিনের জাদু চুয়াডাঙ্গায় অনেকের কাছেই বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লরিন বলেছে, ভালো ফলাফলের জন্য ৯০ ভাগ পরিশ্রম, ৮ শতাংশ মেধা ও ২ শতাংশ ভাগ্য কাজ করে। সে কারণে ভালো ফলাফলের জন্য কঠিন পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। যে পরিশ্রম করে আল্লাহতায়ালা তাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করেন। উপদেশ একটাই, তা হলো নিজের সামর্থের ওপর বিশ্বাস রাখা। আর পড়ার সময় বুঝে পড়া।
উল্লেখ্য, লরিন চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার মানবৃদ্ধিতে অবিস্মরণীয় অনন্য উদাহরণ সৃষ্টিকারী শিক্ষাদান কেন্দ্র রংধনুর একাগ্রচিত্তের শিক্ষার্থী ছিলো। সে ৮ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত রংধনুর শিক্ষার্থী থাকাকালে পর পর তিনবার বেস্ট অব দ্যা বেস্ট নির্বাচিত হয়। তার সম্পর্কে রংধনুর স্বপ্নপুরুষ আব্দুস সালাম (সালাম স্যার) বলেছেন, লরিন তার যোগ্যতা, তার একাগ্রতা আজ তাকে সাফল্যের শীর্ষে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। কারণ সে গত ৪ বছরে আমার শিক্ষাদানকেন্দ্রে একদিনও অনুপস্থিত হতে দেখিনি। ওর জন্য সব সময় আমার দোয়া তো রয়েছেই।
লরিনের পিতা অগ্রণী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার সিনিয়র অফিসার। মা? নির্ভেজাল গৃহিণী হলেও দু কন্যাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য সর্বদা যেমন থাকেন ব্যাতিব্যস্ত, তেমনই তিনি সংসার সামলানোতে সিদ্ধহস্ত। লরিনকে তার পিতা-মাতা অবশ্য চিকিৎসক হিসেবে দেখতে চাননি। চেয়েছেন বড় হোক। লরিন তা হলে কী হবে? কোথায় ভর্তি হবে? এসব প্রশ্নের একটি জবাব, অবশ্যই বুয়েট। কী হতে আগ্রহী? লেখাপড়া শেষ করে বুয়েটেরই শিক্ষক হয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়া। আর পিছিয়ে পড়া চুয়াডাঙ্গাকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় তা সমস্ত কর্মজীবনেই ভেবে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। সর্বশেষে বলতে চাই, মেয়েদের পারতে হলে আমার মতো একটু জেদ নিয়েই লড়তে হবে। মেয়েরাও যে পারে তা দেখানোর জন্য হলেও আমার মতো করে পরিশ্রম করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমি আমার অগ্রযাত্রায় পিতা-মাতা, স্কুল-কলেজে শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।