গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের ৬৮ কারাগারে বাড়তি নিরাপত্তা

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের হত্যার পরিকল্পনা করেছে ধর্মীয় উগ্রপন্থি একটি চক্র। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে বিমান ছিনতাই, কারাগারে আক্রমণসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনাও করছে চক্রটির সদস্যরা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। দলে ভিড়িয়েছে আফগান ফেরত শতাধিক অভিজ্ঞ যোদ্ধা। গোয়েন্দারা এরকমই তথ্য পেয়েছে। সূত্র বলেছে, সব ধরনের ষড়যন্ত্র রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেয়া ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির ইতোমধ্যেই সারাদেশে আত্মগোপনে থাকা সমর যুদ্ধে অভিজ্ঞ আফগান ফেরত শতাধিক যোদ্ধাকে তাদের দলে ভিড়িয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যবা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, তেহরকি তালেবান, কাশ্মীরি মুজাহিদ, হামজা ব্রিগেড ও আরাকানের রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একটি অংশকেও তাদের দলে নিতে সক্ষম হয়েছে। আগামী দু-এক মাসের মধ্যেই চক্রটি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রিপোর্ট পাওয়ার পর সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সারাদেশে চার শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, সংসদ ভবন, সুপ্রিমকোর্ট, সচিবালয়, বেতার ও টেলিভিশন ভবন, দেশব্যাপী ৬৮ কারাগার, শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব কটি বিমান, সমুদ্র বন্দরকে কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ২৬ অক্টোবর প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে ই-মেইল বার্তা দেয়া হয়। পুলিশ সদর দফতর থেকে এ বার্তা পাঠানো হয়। ওই দিনই হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও এক ধাপ বাড়ানো হয়। পুলিশের পাশাপাশি ঢাকায় মোতায়েন করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার (গতকাল) থেকে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তল্লাশিতে ডগ স্কোয়াড নামানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কারাগারগুলোর সামনে অতিরিক্ত পাহারা জোরদার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যে কোন ধরনের হামলার কথা বলা হয়েছে- এমন প্রশ্নে ভারপ্রাপ্ত আইজিপি বলেন, সব ধরনের আশঙ্কা মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা ছক তৈরি করেছে। এ পরিকল্পনার পেছনে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াতে ইসলামের ইন্ধন রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে। দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বিমানবন্দর, জনসমাগমস্থল, বাস, রেল নৌ-টার্মিনাল, বিদ্যুত কেন্দ্র, গ্যাস বিতরণ কেন্দ্র, বিনোদন কেন্দ্র, বিদেশি নাগরিকদের অফিস ও বাসভবনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকার পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে সরেজমিন এসব স্থাপনা প্রতিদিন পরিদর্শন করে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। চিঠিতে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর চারপাশে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, গমনাগমন নিয়ন্ত্রণ ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন ছাড়াও সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৪১৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এ স্থাপনাগুলো চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। এর মধ্যে প্রায় ২০০ স্থাপনাই হচ্ছে প্রথম শ্রেণির। রাজধানীতে রমনা টেলিকমিউনিকেশন ভবনে ৩০ জন, মগবাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভবনে ১৮, শাহবাগ ব্রডকাস্টিং হাউসে ২১, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে ৫৩, জিয়া বিমানবন্দরে ৯৮, তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে ৪৮, সার্ভে অব বাংলাদেশে ১২, তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ গভঃপ্রেস ১৪, সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেস ১৮, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় রেড টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ১৪, শেরেবাংলা নগর ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং হাউসে ৩৮, মহাখালী ভূ-উপকেন্দ্রে ১১, শেরেবাংলা নগর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ১৪, গুলশান টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ১৫, কম্বাইন্ড অবজারভেটরি অ্যান্ড হাইড্রোজেন ফ্রাক্টরি বিল্ডিংয়ে ১২, মিরপুরে বাংলাদেশ বেতারের ট্রান্সমিটিং স্টেশনে ১০, কাকরাইলে ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের ফিল্ম প্রসেসিং ল্যাব অ্যান্ড স্টুডিওতে ২১, তেজগাঁও সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরে ১১, নীলক্ষেত অটোমেটিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ১৫, ধানমণ্ডি বিদ্যুৎ স্টেশনে ১১ ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অফিসে ১২ জন ফোর্সের মঞ্জুরী রয়েছে। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশের পর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্য সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে।
দেশব্যাপি ৬৮টি কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে শাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। এছাড়া কারাগার ঘিরে মাঠে নেমেছে পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)। সাথে রয়েছেন কারা গোয়েন্দা সদস্যরাও।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেলসুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, দেশের প্রতিটি কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারাগারের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর বাইরে ৱ্যাব ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াচ টাউয়ারের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।