প্রথম শ্রেণির দু ছাত্রের বিরোধ : এক অভিভাবকের অপকর্ম শিশুসন্তানের সহপাঠীকে মারলেন এক বিবেকহীন

 

গাংনী প্রতিনিধি: প্রথম শ্রেণির দু সহপাঠীর বেঞ্চে বসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এক শিশুর পিতা অপর এক শিশুকে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর গাংনীর হাড়াভাঙ্গা ডিএইচ সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায়। অভিযুক্ত অভিভাবক শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল কসাইয়ের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় সাধারণ জনগণসহ মাদরাসার ক্ষুব্ধ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

শরিফুল কসাইয়ের নির্মম পিটুনিতে গুরুতর আহত শিশু ইসমাইল হোসেনকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে। সে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের পূর্বপাড়ার মুছাব আলীর ছেলে। ঘটনার প্রতিবাদে মাদরাসার শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে এলাকাবাসী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে। স্থানীয় সচেতনমহল বলেছে, যে অভিভাবক তার সন্তানতুল্য শিশুকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে তার বিবেক জাগিয়ে তুলতে উপযুক্ত শাস্তির বিকল্প নেই। নিজের সন্তানের প্রতি দরদ দেখাতে গিয়ে সন্তানতুল্য অন্যের শিশুসন্তানকে নির্মমভাবে যে ব্যক্তি মারতে পারেন তাকে আর যাই হোক, সভ্য মানুষ বলা যায় না। অসভ্যতার শিক্ষা হওয়া উচিত।

মাদরাসাসূত্রে জানা গেছে, মাদরাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র একই গ্রামের ইসমাইল ও সায়েমের মধ্যে গতকাল সকালে শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল বাধে। সায়েম ক্লাস ছেড়ে বাড়ি গিয়ে তার পিতার কাছে নালিশ দেয়। ক্ষুব্ধ হয়ে তার পিতা আলমগীর ও চাচা শরিফুল ইসলাম ওরফে শরিফুল কসাই মাদরাসায় তেড়ে যান। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সামনেই তারা ইসমাইলকে বেধড়ক মারপিট করেন। আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে রক্তাক্ত জখম করে বীরদর্পে বাড়ি ফিরে যান। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ইসমাইলকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে তাকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার করা হয়।

এদিকে নির্মমভাবে শিশু নির্যাতনের ঘটনা জানাজানি হলে আহত শিশুর পরিবার ও তার পক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে মাদরাসার প্রধান ফটক বন্ধ করে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। মাদরাসার মধ্যে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষের কোনো প্রতিবাদ না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শরিফুল কসাই ও আলমগীরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। পুলিশের ভূমিকা টের পেয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। গ্রেফতার অভিযান এখনো চলছে জানিয়ে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, শরিফুল কসাই ও তার ভাই আলমগীর যতো শক্তিধরই হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করা হবে। শিশু নির্যাতনের ব্যাপারে কোনো প্রকার নমনীয়তা দেখাবে না পুলিশ। এ ব্যাপারে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাদরাসার পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন এ ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় আখ্যায়িত করে বলেন, শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যা যা করা দরকার তা-ই করা হচ্ছে।