স্বল্প পুঁজির ক্ষুদ্র প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের পুঁজি আর কতোই থাকে! তাও যদি প্রতিদিন কয়েনে বা খুচরোয় বন্দি হয়ে যায়, তা হলে পরিশ্রম করেও পথে বসা ছাড়া যে গত্যান্তর থাকে না, তা ভাবতে হবে। সমস্যাটা ছোট নয়, সেহেতু খাটো করে দেখার কারণ নেই। দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা উদ্ভূত পরিস্থিতিকে যে প্রকট করে তুলবে তা বলাই বাহুল্য।
মুদ্রার প্রচলন বহু পুরোনো। অত্যাবশ্যকীয়। এক সময় এক আনায় যা হতো এখন ষোলো আনায়ও তা দুরস্ত, পাঁচকুড়িতেও মেলে না, মিলছে না। তার মানে এই নয় যে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মুদ্রার মান ধরে রাখতে পারিনি। মুদ্রার ক্রমাবমূল্যয়ন সময়ের স্রোতেরই সাক্ষ্য। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশের মুদ্রামান বিশ্ববাজারে বেড়েছে অনেক। সে হিসেবে এগিয়েছি আমরা। তা হলে খুচরো টাকা-পয়সার বেহাল দশা কেন?
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশের সকল অঞ্চলে খুচরো টাকা-পয়সা তথা কয়েনের করুণ দশা নয়। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও যশোর শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছুদিন আগে গুজব রটে, ‘কয়েন বাতিল। অচল হয়ে গেছে। ব্যাংক নিচ্ছে না।’ গুজবে পরিস্থিতিটাকেই বদলে দিলো। কেউ প্রশ্ন করলো না ব্যাংক থেকে খুচরো টাকা-পয়সা গ্রাহকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে সরবরাহ করা হলেও জমার ক্ষেত্রে তা নেয়ার রেওয়াজ কি আগেও ছিলো?
ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকা-পয়সা লেনদেন স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সমাজে মাঝে মাঝে আজগুবি গুজব স্বাভাবিক স্রোতকে শুধু প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করে না, বিশৃঙ্খল করে তোলে। অবশ্য গুজবেরও গোড়া থাকে, থাকে কারণও। হঠাৎ করে যখন কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ থেকে উচ্চারিত হয় ‘৫ টাকার নোটও আর ব্যাংক নোট’ থাকছে না তখন খুচরা পয়সা নিয়ে গুজব রটা হুচুকে বাঙালি সমাজে কি খুব অস্বাভাবিক ঘটনা? ভেবে দেখবেন ধর্মাবতা।
যেহেতু কয়েন নিয়ে শহর বন্দর, গ্রামবাংলায় প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ সমস্যায় পড়েছেন। পুঁজি সঙ্কটে পথে বসার শঙ্কায় যশোর নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমেছেন। নওয়াপাড়ার ব্যবসায়ীদের দাবি মূলত গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্ষুদ্র সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি। এ দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকারের শীর্ষ কর্তাদের তড়িত আশু পদক্ষেপ প্রয়োজন।