পাকিস্তান-আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩৫

মাথাভাঙ্গা মনিটর: হিন্দুকুশ পর্বতমালায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩৫ জনে। এর মধ্যে পাকিস্তানে অন্তত ২৩৫ জন এবং আফগানিস্তানে ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার আলজাজিরার খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে শত শত বাড়িঘর।

সোমবার বিকালে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার এ ভূমিকম্প হয়। কম্পন অনুভূত হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশেও।

এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ যুক্তরাষ্ট্র সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসছেন। ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শোক জানিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে হতাহতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দফতরের (ইউএসজিএস) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় ৩টা ৯ মিনিটে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ২৫০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে হিন্দুকুশ অঞ্চলের ২১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। এটির স্থায়িত্ব ছিল প্রায় ৪০ সেকেন্ড। ওই এলাকার কাছেই পাকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সীমান্ত। প্রথম আঘাত হানার ৪০ মিনিট পর ৪ দশমিক ৫ মাত্রার দ্বিতীয় কম্পন অনুভূত হয় একই এলাকায়। প্রথম আঘাতেই বিস্তৃত এলাকার টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির খবর পেতে দেরি হচ্ছে। পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় আফগান সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। ধসে পড়েছে কয়েকশ’ ঘরবাড়ি।

প্রাদেশিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী ছাড়াও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থা উদ্ধার কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ২ হাজার উদ্ধার ক্যাম্প বসানো হয়েছে। চিত্রল প্রদেশের পুলিশ প্রধান শাহ জাহান জানান, টেলিফোন যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। করিমাবাদ শহরের বাসিন্দা আনাস বলেছেন, আমার মনে হল, কেউ বুঝি আমাদের ধরে ঝাঁকি দিচ্ছে। এরপর দেখলাম ধস নামছে। আমাদের চোখের সামনে আস্ত একটা পাহাড় যেন নেমে এলো। কুনার প্রদেশের গভর্নর ওয়াহিদুল্লা কালিমজাই জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার প্রদেশে। ব্যাপক কম্পনে প্রায় ১ হাজার ৫শ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। দেশটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলেন, বেশি প্রাণহানি ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে বাদাকশান, তাকার, নানগাহার ও কুনার অঞ্চলে। ভূমিকম্পের সময় ভারতের বিভিন্ন শহরেও মানুষ আতংকে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। দেশটির হরিয়ানা, পাঞ্জাব, কাশ্মীর ও হিমাচল প্রদেশে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে অনেক স্কুল ও অফিস থেকে লোকজনকে বের করে আনা হয়। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্প শুরু হলে দিল্লির মেট্রো রেল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। এক টুইটে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিরূপণের নির্দেশ দেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ যেখানে যে সহায়তা প্রয়োজন, তা দিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রায় ৬ মাস পর আফগানিস্তানে এ ভূমিকম্প হল। নেপালে ২৫ এপ্রিলের ওই ভূমিকম্প এবং তার পরের কয়েক দফা কম্পনে ৯ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়।

বাংলাদেশেও মৃদু কম্পন অনুভূত: পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ভারতও। কম্পন অনুভূত হয় বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. জাকির হোসেন এ তথ্য জানান। সোমবার আবহাওয়া অধিদফতর থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, স্থানীয় সময় বিকাল ৩টা ৯ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে ভূকম্পনটি অনুভূত হয়। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে দু হাজার ৩১১ কিলোমিটার দূরে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে। তবে বাংলাদেশে এর মাত্রা কত ছিলো তা বিবৃতিতে জানানো হয়নি।