মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: এপার বাংলা ওপার বাংলার বাতাসে শারদীয় উৎসবের আমেজ। সনাতন ধর্মালম্বিদের এ আমেজকে পূর্ণতা দিতে যেমন বাড়তি নিরাপত্তার আয়োজন, তেমনই জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘুরে ফিরেই করছেন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন। আর্থিক সহযোগিতা প্রদানেও কমতি নেই। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পক্ষ থেকে পৌর এলাকার পূজামণ্ডপগুলোতে নগদ আর্থিক সহযোগিতা ও বস্ত্র বিতরণের উদ্বোধন করা হয়। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা বেলগাছি দাসপাড়ার শ্রী শ্রী শিব দুর্গামন্দিরে এ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম মনি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ললিত কুমার দাস এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও গুণীজন। উদ্বোধন শেষে গতকালই কুলচারা সার্বজনীন দুর্গামন্দির ও মালোপাড়ার শ্রী শ্রী কালী দুর্গামন্দিরে নগদ আর্থিক অনুদান ও বস্ত্র বিতরণ করা হয়। বিতরণের শেষে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করে দেখেন। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জানান, প্রত্যেকটি মন্দিরে নগদ ১০ হাজার টাকা ও হিন্দু ধর্মলম্বী দরিদ্র পরিবারের মাঝে লুঙ্গি ও শাড়ি বিতরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পৌর এলাকার প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে আর্থিক অনুদান ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। তিনি আরো জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উৎসব যেন কোনো প্রকার বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক নজর রাখতে হবে। এছাড়াও তিনি বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান।
অপরদিকে, গতরাত সাড়ে ৯টায় চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার সার্বজনীন দুর্গাপূজা ও নামযজ্ঞ দুর্গামন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসবের সূচনালগ্নে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা হিন্দু খ্রিস্টান বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. মার্টিন হিরক চৌধুরীসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গার ক্যানেলপাড়া সার্বজনীন দুর্গামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন এএসপি (সার্কেল) সুফি উল্লাহ ও আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোনিয়া হাসান। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় এ মণ্ডপে দুর্গোৎসব পরিদর্শকালে মন্দির চত্বরে পরিবেশিত বাউল সঙ্গীতও উপভোগ করেন তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী রাসেল, ক্যানেলপাড়া সার্বজনীন দুর্গামণ্ডপের সভাপতি দেবদাস দে, সাধারণ সম্পাদক রিপন বিশ্বাস, শম্ভু কুমার দত্ত, অসিত কুমার দত্ত, দিলীপ কুমার সরকার, উত্তম কুমার দত্ত, অজিত কুমার ভারতী, দীপক বিশ্বাস প্রমুখ। এ বছর আলমডাঙ্গা পৌরসভা এলাকায় ১১টিসহ উপজেলায় মোট ৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হচ্ছে। ৩১টি মণ্ডপের মধ্যে ১৭টি পূজামণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পৌর শহরের ১১টি পূজামণ্ডপের মধ্যে ৯টি মণ্ডপকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে প্রতিটি পূজামণ্ডপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল হালিম উপজেলার ডুগডুগি পূজামণ্ডপ, পারকৃষ্ণপুর, রামনগর দাসপাড়া, রামনগর বাগদিপাড়া, দর্শনা পুরাতন পূজামণ্ডপ, দর্শনা কেরুজ পূজামণ্ডপ, দর্শনা সুইপার কলোনি, ছোটদুধ পাতিলা ও জয়রামপুর কাঁঠালতলা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টু, উপজেলা আইসিটি টেকনিশিয়ান খাইরুল কবির দিনারসহ স্ব স্ব পূজামণ্ডপ পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
হাটবোয়ালিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পপাড়ায় বসবাসরত হিন্দুধর্মাবলীরা এ প্রথম ক্যাম্পপাড়ায় শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছেন। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দিপনার মধ্যে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠী পূজো দিয়ে এ পূজামণ্ডপের উদ্বোধন করা হয়। হাটবোয়ালিয়া ক্যাম্পপাড়া শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রীদাম চন্দ্র পালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভাংবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশাবুল হক ঠাণ্ডু, হাটবোয়ালিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা কালু জোয়ার্দ্দার, মিন্টো, ডাবলু, হাটবোয়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্প আইসি সেকান্দার আলী প্রমুখ। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন মনির মাস্টার।
জামিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত রোববার ছিলো দুর্গা দেবীর বোধন। তবে দুর্গা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়েই দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। দুর্গতি নাশিনী দেবী দুর্গার আগমণে উচ্ছ্বসিত ভক্তকূল। গতকাল সোমবার ছিলো ষষ্ঠী পূজা। দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস এবং সন্ধ্যায় ছিলো ভক্তিমূলক সঙ্গীতানুষ্ঠান। ২০ অক্টোবর দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, সপ্তমী ও মহাসপ্তমী পূজো। ২১ অক্টোবর মহাষ্টমী, কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা। ২২ অক্টোবর একই দিনে মহানবমী এবং দশমী পূজা। ২৩ অক্টোবর দশমী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিজয়া দশমী প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে।