স্থানীয় নির্বাচনের জন্য বদলাতে হবে দলের গঠনতন্ত্রও

স্টাফ রিপোর্টার: দলীয় প্রতীকে ভোটের উদ্যোগ চললেও রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এখনও স্থানীয় নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নেই। ফলে আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন এবং তার কয়েক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার আগে দলগুলোকে তাদের গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনতে হবে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব এ সপ্তাহেই মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। পৌরসভা নির্বাচন কাছাকাছি বলে অধ্যাদেশ জারি করে সংশোধিত আইন কার্যকর করা হবে।

এতোদিন ধরে উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে হবে এসব নির্বাচন, প্রার্থী মনোনয়ন দেবে দলগুলো। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকে এবং সে প্রক্রিয়া তাদের গঠনতন্ত্রেও রয়েছে। আইন সংশোধনের উদ্যোগের মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্র ঘেঁটে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার কোনো বিবরণ দেখা যায়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন শাখার সুপারিশ নিয়ে সংসদীয় বোর্ডের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করে। দলটির গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারায় জাতীয় পর্যায়ে এ প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এ বিধান কার্যকর বলে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে কিছুটা সংশোধন করতে হতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন পাস হওয়ার পরে সাংগঠনিক বিষয়গুলো নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি অবশ্যই আলোচনা করবে। গঠনতন্ত্র ছোটোখাটো সংশোধন আনতে হলে তা অবশ্যই করা হবে। প্রয়োজনীয় সংশোধনী পরে কাউন্সিলে পাস করে নিতে হবে। তবে এনিয়ে কোনো জটিলতা হবে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের এ নেতা। সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও গেলেও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে আইন সংশোধনের বিরোধিতা রয়েছে তাদের। গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, যখন যা দরকার, তাই করবো। আমরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। দেখা যাক, সরকার শেষ পর্যন্ত কী করে। আইন সংশোধনের উদ্যোগের বিরোধিতা করে সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার তো সংবিধানবিরোধীভাবে এ আইনের সংশোধন আনছে। আইন সংশোধনের জন্য সব দলের মতামত নেয়া দরকার ছিলো। স্থানীয় সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি নির্দলীয় থেকে দলীয় করা কোনোভাবেই উচিত নয়। বিএনপিবিহীন সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রেও ২১ ধারায় শুধু সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের কথা রয়েছে। ফলে তাদেরও গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দল রয়েছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর পর সংশোধিত গঠনতন্ত্র দিয়ে নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো দলগুলো। পরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের আলোকে কাউন্সিলের মাধ্যমে স্থায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জমা দেয় ইসিতে। এবার প্রয়োজন হলে সংশোধনী এনে পরে দেয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানান ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনে প্রয়োজন হলে তারা আমাদের কাছে সময় চাইতে পারে। এ সংক্রান্ত আবেদন ইসিতে জমা দিলে কাউন্সিলের পর চূড়ান্তভাবে তা জমা দিতে পারবে। এ প্রথম স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় নানা ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের অনেক কর্মকর্তা। সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশনের সাথেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা শাখার একজন সদস্যকেও ইসিতে দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নেতা বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে এখন মাত্র প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তা বাস্তবায়ন অনেক কঠিন। দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হবে, তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন অনেক জটিল বিষয়।