দীর্ঘ ছয়মাস পর মিয়ানমারের জঙ্গল থেকে বাড়ি ফিরলো চুয়াডাঙ্গার বলদিয়ার সুমন

স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ ছয়মাস পর মিয়ানমারের জঙ্গল থেকে মো. সুমন (১৬) নামে পাচারের শিকার এক কিশোর বাড়ি ফিরেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বলদিয়া গ্রামের সুমনকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাচারের শিকার ভ্যানচালক সুমন বলদিয়া গ্রামের মৃত পিনুর ছেলে। জাতীয় রেডক্রিসেন্ট হেডকোয়ার্টারের ট্রেসিং বিভাগের অনুসন্ধান বিভাগ যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্য ইব্রাহীম কাজী চুয়াডাঙ্গা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমানের কাছে সুমনকে হস্তান্তর করেন। এরপর সুমনকে অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় চুয়াডাঙ্গা যুব রেডক্রিসেন্ট সদস্য উবাইদুল ইসলাম তুহিন উপস্থিত ছিলেন।

ফিরে আসা কিশোর সুমন জানায়, ডিহিকৃষ্ণপুর গ্রামের দালাল মাসুদ মোল্লা মালয়েশিয়ায় পাইপ কারখানায় ৩০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার নাম করে পানিপথে মিয়ানমার পাঠায়। দীর্ঘ ৬ মাস সাগরে ও মায়ানমার জঙ্গলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোয়াতে হয়। সাগরে সামান্য নুডলস ও ৫০ গ্রাম পানি আর কাঁকড়া খেয়ে কোনোরকম জীবনধারণ করতে হয়। পরে মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর গত ১২ অক্টোবর টেকনাফ সীমান্ত হয়ে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সুমন আরো জানায়, গত ১৪ এপ্রিল মঙ্গলবার সদর উপজেলার ডিহিকৃষ্ণপুরের মাসুদ মোল্লা, অপরিচিত আরেকজন এবং আমি আলমসাধুযোগে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে আসি। এরপর ঢাকাগামী চিত্রা আন্তঃনগর ট্রেনে চেপে মাসুদ মোল্লাসহ আমি মালয়েশিয়ার উদ্দেশে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করি। ঢাকায় নেমে মাসুদ মোল্লা আরেকজনের কাছে আমাকে রেখে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে আসে। ওই অপরিচিত লোকের সাথে আমি কক্সবাজার সীমান্তের টেকনাফের উদ্দেশে রওনা হই। টেকনাফ থেকে ২৮ জন যাত্রী (পাচারমুখি) নিয়ে মাঝ সাগর বরাবর একটি ট্রলার রওনা হয়। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজে আমাকে তুলে দেয়া হয়। জাহাজে ওঠার পর জানতে পারি ওই জাহাজে আমার মতো আরও সাড়ে ৩শ মানুষ রয়েছে। এভাবে সাগরে আটকে রেখে দুর্বিষহ নির্যাতন করা হয় এবং পরিবারে সদস্যদের সাথে মোবাইলে কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা লুটে নেয় । এভাবে সাগরে, মিয়ানমার জঙ্গলে ও ধরা পড়ার পর মিয়ানমার নৌবাহিনীর কাছে পর্যায়ক্রমে ৬ মাস থাকার পর অবশেষে বাড়ি ফিরে আসি। সুমন জানায়, তার মতো আর কেউ যেন সাগরপথে কোনো দেশে না যায়।

সুমনের চাচা সাজ্জাত হোসেন জানান, সুমনকে জঙ্গলে আটকে রেখে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা আদায় করে দালালচক্র। ছেলের জীবন বাঁচাতে টাকা দেয়া হয়। তিনি দালাল মাসুদ মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান। সুমনের আরেক চাচা ওহেদ হোসেন জানান, তার বড় ভাই পিনুর মৃত্যুর সময় সুমনের বয়স ছিলো একবছর। ওই সময় তার ভাই সাজ্জাত হোসেনের সাথে ভাবির বিয়ে হয়। ওই সংসারে দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে। সুমন বাড়ি থেকে যাওয়ার সময় কাউকে কিছু না বলে তার ভ্যানবিক্রির টাকাসহ ৩ হাজার টাকা নিয়ে গ্রাম ত্যাগ করে। দালালদের টাকা যোগাতে গিয়ে ভিটে জমি ৯ শতক নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হয়েছে। এখন ভূমিহীন তারা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিহি গ্রামের মৃত আজিম মোল্লার ছেলে অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, তিনি একজন ক্ষুদ্র ফলব্যবসায়ী। জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বিভিন্নভাবে তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ৬/৭টি মামলা দায়ের করেছে।   বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, ভিকটিমের পরিবারকে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা দেয়া হবে।

Leave a comment