হোটেলের বিরিয়ানি খাওয়ার পর দু বোনের মৃত্যু : মা-বাবাও আশঙ্কাজনক

স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি হোটেল থেকে আনা বিরিয়ানি খাওয়ার পর দু বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মা-বাবার অবস্থাও আশঙ্কাজনক। বমি ও পাতলা পায়খানার সমস্যায় আক্রান্ত পরিবারের চারজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর দু শিশুর মৃত্যু হয়।

পুলিশ বলেছে, শিশুদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই কিন্তু তাদের নাক, মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছিলো। চিকিৎসকরা বলছেন, বিরিয়ানিগুলো হয়তো বাসি ছিলো। এতে বিষক্রিয়ায় পরিবারটির চার সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে দু শিশু মারা যায়।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামের বাসিন্দা মাইক্রোবাসচালক মিজানুর রহমান (৪৫) চকরিয়ার চিরিঙ্গা স্টেশনের কাজী মার্কেটের কেন্ডি ফাস্ট ফুড অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউজে বসে বিরিয়ানি খান। এরপর তিনি স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বুলু (৩৮) ও দু মেয়ে তানজিলা জান্নাত মাহি (৭) ও ইয়াসমিন মিলির (৪) জন্য তিন প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসেন। খাওয়ার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনজনই অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন মিজানও। রাতেই স্থানীয় একটি হাসপাতালে মারা যায় মিলি। এরপর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মাহির মৃত্যু হয়। মিজান ও তাঁর স্ত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, মিজানের দু মেয়ের রক্তবমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার পর আত্মীয়স্বজন তাদের চকরিয়ার চিরিঙ্গা স্টেশনের বেসরকারি জমজম হাসপাতালে নিয়ে যায়। জমজম হাসপাতালের অন্যতম পরিচালক জিএএম আশেক উল্লাহ বলেন, গত মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতাউর রহমান তাৎক্ষণিক তাদের পরীক্ষা করে দেখেন ছোট মেয়ে মিলি মারা গেছে। তখন এ চিকিৎসক অন্যদের চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাতেই জমজম হাসপাতাল থেকে বাকি তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভোরের দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাহি।

গতকাল বুধবার দুপুরে পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক প্রদীপ ওই দু শিশুর লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালমর্গে পাঠান। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় পরিবারের চারজনই আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে দু শিশু মারা গেছে। তাদের শরীরে কোনো ধরনের আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও নাক ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। দু শিশুর খালা জেসমিন আক্তার বলেন, আমার ভাগ্নি দুটি বিরায়ানি খাবার আবদার ধরেছিলো তাদের বাবার কাছে। এ কারণেই আমার ভগ্নিপতি মঙ্গলবার রাতে বিরিয়ানি কিনে বাড়িতে নিয়ে যান। আমার বোনসহ সবাই সেই বিরিয়ানি খাওয়ার পর তাদের রক্তবমি ও পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এদিকে চিরিঙ্গা স্টেশনের সেই দোকানে গতকালও খাবার বিক্রি হয়েছে। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

জানা গেছে, চকরিয়ার পালাকাটা গ্রামের মুজিবুর রহমান, লামার চিরিঙ্গা গ্রামের মুজিবুল হক ও চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার শোকছড়ি গ্রামের আহমেদ হোসেন এ দোকানের মালিক। তাদের মধ্যে মুজিবুর রহমান দাবি করেন, মঙ্গলবার দোকানটিতে ২৪ কেজি চালের বিরিয়ানি তৈরি করা হয়েছিলো। এক দিনে ২৬৪ প্যাকেট বিরিয়ানি বিক্রি করেছেন। কিন্তু আর কেউ অসুস্থ হওয়ার কথা শোনা যায়নি বা অভিযোগও আসেনি। তাই তিনি বিরিয়ানি খেয়ে মিজান ও তার স্ত্রী-সন্তানের অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। চকরিয়া থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, আমি শুনেছি, বিরিয়ানি খেয়ে দু শিশু মারা গেছে এবং অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে তাদের মা-বাবাও। ঘটনাটির ব্যাপারে আমার থানায় নাকি পেকুয়া থানায় মামালা হয় দেখি, তারপরই আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।