হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত : ভ্যাট দিতেই হবে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল শিক্ষার্থীদের

 

স্টাফ রিপোর্টার: ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে সরকারকে। ভ্যাট নেয়া স্থগিত করে এর আগে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন তা আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি স্থগিত করায় শিক্ষার্থীরা আবার ভ্যাটের আওতায় এসেছে।

গতকাল বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় মাসের জন্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো কর্তৃক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় স্থগিত করেন। একই সাথে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত কেনো বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও শিক্ষাসচিবকে এর জবাব দিতে বলা হয়েছিলো। ভ্যাট প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে সানিডেল ও সান বিম স্কুলের দু শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে ওই আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমের ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর ২০১২ সালে সাড়ে চার শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো হয়। চলতি বছর এ ভ্যাটের পরিমাণ সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। এ অবস্থায় ভ্যাট প্রত্যাহারের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। আন্দোলনের মুখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর বসানো একই পরিমাণ ভ্যাট সরকার প্রত্যাহার করে নেয়ার তিন দিনের মাথায় ইংরেজি মাধ্যমের দু শিক্ষার্থীর অভিভাবক এ রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনকারীদের যুক্তি ছিলো বাংলা মাধ্যমের স্কুলে ভ্যাট আরোপ না থাকলেও ইংরেজি মাধ্যমে ভ্যাট আরোপ করা বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী।

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানি করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মনিরুজ্জামান। আদেশ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ভ্যাট আইন অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায় করার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে। হাইকোর্ট ওই সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এ নিয়ে এনবিআর বিভ্রান্তিতে পড়ে। এ কারণেই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চাওয়া হয়েছে। আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. শাহদীন মালিক ও এম মনজুর আলম। ড. শাহদীন মালিক বলেন, ভেবেছিলাম স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সরকার শুধু বেসরকারি স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে ছাড়বে। এটি বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় করা হচ্ছে গত অর্থবছর থেকে। ওই বছর এ খাতে রাজস্ব বিভাগের আয় হয়েছিলো ৫৭ কোটি টাকা। এবারের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ কোটি টাকা। গতকালের আদেশের পর বাজেটে ঘোষিত সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ে এখন আর বাধা রইল না এনবিআরের। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা বলেন, কাল থেকেই কার্যকর হবে এ আদেশ। ব্যাখ্যা করে ওই কর্মকর্তা বলেন, আজকে যদি কোনো অভিভাবক ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ুয়া সন্তানের বেতন দিতে যান তাঁকে ভ্যাটসহ বেতন পরিশোধ করতে হবে। এমনকি আগের স্থগিতাদেশের কারণে যে মাসের বেতনের সাথে ভ্যাট নেয়া হয়নি এখন তা-ও পরিশোধ করতে হবে।