ইতালীয়র পর জাপানের নাগরিককে গুলি করে খুন এবং

ঢাকায় গত সোমবার গুলি করে এক ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়। মাত্র পাঁচ দিন পর গত শনিবার হোসে কোমিও নামের এক জাপানি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে রংপুর শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের আলুটারি গ্রামে। এ হত্যাকাণ্ড দুটিকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। পৃথক স্থানে হলেও দুজন বিদেশিকে একইভাবে খুনের সাথে যোগসূত্র রয়েছে বলে ইতোমধ্যেই সরকারের দায়িত্বশীলরা অনুমান করতে শুরু করেছেন। আইএস এ খুনের দায় স্বীকার করেছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। যদিও তার সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আমেরিকার বাংলাদেশস্থ রাষ্ট্রদূত।

ইতালীয় নাগরিককে হত্যার পর ইসলামিক স্টেট (আইএস) হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলের ওপর বিশেষ সতর্কতা জারি করে। কিন্তু জাপানি নাগরিক হোসেকে কারা কী উদ্দেশ্যে হত্যা করেছে, প্রাথমিকভাবে তা জানা যায়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইতালীয় নাগরিকের পর জাপানি নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনা সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে এবং যেকোনো মূল্যে খুনিদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং খুনিদের অবিলম্বে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশে পর পর দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় এবং তার সাথে আইএসের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ সামনে চলে আসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করছে।

আইএস, আল-কায়েদা, তালেবান ইত্যাদি জঙ্গিবাহিনী বিশ্বব্যাপিই আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার মতো সুনিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলার দেশগুলোতেও এখন জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে তারা প্রবেশ করতে পারবে না এমন ভাবার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই, বিশেষ করে যেখানে নানা নামে শতাধিক জঙ্গি সংগঠন অনেক দিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। হয়তো এদেরই কেউ কেউ আইএস বা আল-কায়েদার হয়ে সহিংসতা চালাচ্ছে। নিকট অতীতে হরতাল-অবরোধের সময়ও আমরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। হুজি, জেএমবি বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন নির্মূল পুরোপুরি করা গেছে এমন দাবি করাও যুক্তিসঙ্গত নয়। তাই কোন নামে কোন জঙ্গি সংগঠন কী করেছে- এসব বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়।

নিকট অতীতে পুলিশ হত্যা করে প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়া, একের পর এক ব্লগার হত্যা, বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির খুঁজে পাওয়া, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও রসদ উদ্ধার দেশে অশুভ শক্তির উপস্থিতিরই স্পষ্ট আলামত। তাদের নানাভাবে মদদ দেয়ার মতো লোকেরও অভাব নেই। ইতোমধ্যে জঙ্গিদের অর্থ সাহায্য করার অভিযোগে কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। তাই জঙ্গি দমনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের সুনাম রক্ষা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখার স্বার্থেই বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান জরুরি। খুনিদের অবিলম্বে শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সাথে অপরাধীদের অপরাধমূলক অপকর্ম করার আগেই ধরতে পারার মতো দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার।