মহেশপুরে মায়ের সাথে ১১ মাসের শিশুর ১৯ ঘণ্টা হাজতবাস

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: মহেশপুরে ১১ মাসের শিশুপুত্র রয়েল ওরফে আলিফ মায়ের সাথে থানাহাজতে থাকাকে কেন্দ্র করে তুলকালাম হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ বলছে, হাজত না থানার বারান্দা।

জানা গেছে, মহেশপুর থানার সহকারী টিএসআই আমির আলী গত বুধবার রাতে নাটিমা করিপোল গ্রামের আজিজের বাড়ি থেকে তার স্ত্রী সুখিমনি, তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা লিপি বেগম  ও আব্দুর রাজ্জাকসহ ৩ জনকে থানায় নিয়ে যায়। সেই সাথে লিপি বেগমের ১১ মাসের শিশুসন্তান রয়েল ওরফে আলিফকেও নিয়ে যায়। গত বুধবার রাত ৮টায় আটক করে মা-ছেলেকে, আর বৃহস্পতিবার ৩টায় মুক্তি পান তারা। পরিবারের দাবি পুলিশকে ৪২ হাজার টাকা দিয়ে মুক্ত করতে হয়েছে তাদের। অবশ্য পুলিশ এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই বলছে না। পুলিশ বলছে, এ বিষয়টি নিয়ে পরে কথা হবে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভালাইপুর গ্রামের আজব আলীর ছেলে রাজু আহম্মদের নামে ইতঃপূর্বে একটি মামলা ছিলো। যে মামলায় তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়ে ১৬ দিন আগে বাড়িতে আসেন। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই। তারপরও পুলিশ তাকে আটক করতে যায়। বুধবার রাতে রাজু স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উপজেলার নাটিমা গ্রামে আব্দুল আজিজ নামের এক আত্মিয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। রাত ৮টার দিকে ওই বাড়িতে পুলিশ যায়। পুলিশ রাজুর নাম ধরে খোঁজ করতে থাকলে তিনি অবস্থা বুঝে দৌড়ে পালিয়ে যান। মহেশপুর থানার টিএসআই আমির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে তাড়া করে আটক করতে না পেরে তার স্ত্রী আর ১১ মাস বয়সী শিশুসন্তান রয়েলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আটকের সময় তার স্ত্রীকে মারপিঠ করা হয়েছে। কোনো নারী পুলিশ না থাকায় পুরুষ পুলিশরা তাকে মারপিঠ করে। এরপর তাদের টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। বুধবার সারা রাত ওই শিশুটিকে তার মায়ের সাথে থানাহাজতে আটকে রাখা হয়।

রাজু আহম্মদ জানান, গত বুধবার রাতে তার স্ত্রী-সন্তানকে হাজতে আটকে রেখে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় টাকার দাবি। পুলিশের ওই কর্মকর্তা মা-ছেলেকে ছাড়তে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। এ টাকা না দিতে পারায় দুপুর পর্যন্ত তাদের আটকে রাখেন। এক পর্যায়ে ৪২ হাজার টাকা দিয়ে বেলা ৩টার দিকে তাদের মুক্ত করা হয়। তিনি আরও জানান, ধার দেনা করে টাকার জোগাড় করে তার চাচা আব্দুল আজিজের হাত দিয়ে টাকা থানায় পৌঁছে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আব্দুল আজিজ জানান, তিনি বৌমাকে ছাড়াতে থানায় গেলে পুলিশ টাকার প্রস্তাব দেন। রাজু মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পুলিশ কর্মকর্তার সাথে টাকার চুক্তি করেন। পরে টাকার জোগাড় করে তার হাতে দিলে তিনি রাতে আটক করতে যাওয়া ওই কর্মকর্তার হাতে তুলে দেন।

টিএসআই আমির হোসেন জানান, রাজু আহম্মদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সে কারণে তাকে আটক করতে যান। পুলিশ দেখে রাজু পালিয়ে যায়। এরপর তার স্ত্রীকে একা অন্যের বাড়িতে রেখে আসলে ক্যামন হয়, তাই নিরাপত্তার জন্য থানায় নিয়ে আনা হয়। হাজতে রাখার বিষয়ে বলেন, নিরাপত্তার জন্যই রাখা হয়েছে। আর ৪২ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। বার বার প্রশ্ন করলেও তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে এড়িয়ে যান।

অবশ্য মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম শাহিন জানিয়েছেন, তারা স্বামী-স্ত্রী ওই বাড়িতে অবস্থানকালে এলাকার লোকজন খারাপ ধারনা করে আটক করে। তারা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখে ছেলেটি পালিয়ে গেছে। মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসে। পরে তারা স্বামী-স্ত্রী জানতে পেরে ছেড়ে দেয়া হয়। এখানে টাকা পয়সার কোনো লেন-দেন নেই বলে তিনি দাবি করেছেন।