বিজ্ঞানের এ যুগেও মশার হাতে মৃত্যু কি মেনে নেয়া যায়?

 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দু সপ্তাহে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫০৮ জন, যা ২০১৪ সালের সারা বছরের তুলনায় ১৩৫ জন বেশি। এ খবর অবশ্যই উদ্বেগের। আতঙ্কেরও।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ বর্ষা মরসুমটা জুড়েই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য, মার্চে ২ জন, এপ্রিলে ২ জন এবং মে মাসে একজন। কিন্তু মশার উপদ্রব বাড়ায় জুন মাসে ১৫ জন ও জুলাই মাসে ১৫৬ জন এবং আগস্ট মাসে ৫৮৩ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাসের প্রথম দু সপ্তাহে এ জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ৩৭৩ জন, ২০১৩ সালে ১৪৭৮ জন, ২০১২ সালে ১২৮৬ জন, ২০১১ সালে ১৩৬২ ডেঙ্গু আক্রান্ত  রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেও কেউ মারা যাননি। ২০১০ সালে ৪০৯ জন ভর্তি হয়েছেন যাদের মধ্যে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ৪১১ জন।

যে মশা ডেঙ্গুজীবণু বহন করে তাকে এডিস মশা বলা হয়। এর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সচেতনতামূলক কিছু পদক্ষেপে। তবে তা এককভাবে সম্ভব নয়। সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব। যদিও চীনে এডিস মশা রোধে মশার চাষ করে সফলতা পেয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অপরদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধকসহ চিকিৎসার ওষুধও আবিষ্কারের পথে। প্রতিরোধক অবশ্য কবে নাগাদ আসবে তা এখনও অনিশ্চয়তার মধ্যে। তার আগে দরকার এডিস মশা উৎপাদন রোধে দায়িত্বশীলতা। নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি টব, ডাবের খোলা, টায়ার, প্লাসটিকের অব্যবহৃত বোতলসহ যেসব পাত্রে পানি জমে তা পরিষ্কার রাখতে পারলে ওই ভয়ঙ্কর মশা- এডিস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

সরকারি-বেসরকারিভাবে সর্বস্তরে এডিস মশা রোধে দ্রুত বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। এডিস মশা যেহেতু ধনী-গরিব শাদা-কালো দেখে বসে না, সেহেতু সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। জেলা, থানা, গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা ছড়াতে হবে। সুচিকিৎসাও পৌঁছে দিতে হবে সর্বস্তরে। বিজ্ঞানের এ যুগেও মশার হাতে মৃত্যু কি মেনে নেয়া যায়?