বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দিনভর বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের দিনভর অবস্থান ধর্মঘটে গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকা ছিলো অচল। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন কোটি মানুষ। গতকাল বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর অন্তত ৯টি পয়েন্টে অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ চালায়। রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। সকাল ১০টায় শুরু হয় ভোগান্তিপর্ব। দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত তা প্রলম্বিত হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলেও সন্ধ্যা ৭টার পরও নগরীতে ছিলো একরকম স্থবিরতা। অচলাবস্থার কারণে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে হয়েছে কর্মজীবী মানুষকে। অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালগামী রোগী, গর্ভবতী মা, শিশু-নারী, বয়স্কদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দমবন্ধ অবস্থায় সময় কাটাতে হয়। এমন নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও সরকার বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রায় সারা দিনই ছিলো একরকম নির্বিকার। শেষ বিকেলে অর্থমন্ত্রী এবং সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঘোষণা দেয়- শিক্ষার্থীরা নয়, ভ্যাট পরিশোধ করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ঘোষণা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছাতে মোবাইলফোন কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এসএমএসও দেয়া হয়। একই সময়ে ব্র্যাক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও ছাত্রদের কাছ থেকে আদায় করা ভ্যাট ফেরত এবং টিউশন ফি না বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে আস্তে আস্তে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিতে থাকে। একই দাবিতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের যেসব জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানেও বিক্ষোভ হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীরা বলেছে, তারা গুজবের পেছনে ছুটে অবরোধ তুলে নিয়েছে। তারা আজ আবারও আন্দোলনে নামবে। কেননা, তারা যে ঘোষণা পেয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। শেষ পর্যন্ত তাদেরই ভ্যাট দিতে হবে। এ বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শুভ (পূর্ণ নাম প্রকাশে রাজি নয়) মোবাইলফোনে বলেন, আমাদের আন্দোলন আজ আবার হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো উত্তরা, রামপুরা ব্রিজ, মহাখালী, বসুন্ধরা, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর, বনানী-কাকলী পয়েন্টে বিক্ষোভ হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা এ জন্য যে, গুজব ছড়িয়ে আমাদের আজকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ভ্যাট ভার্সিটিতে ইনক্লুড করার যে কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে ছাত্রদের ওপরই বর্তাবে।’
এদিকে ‘ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে, না শিক্ষার্থী’ এ ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ইশফাক ইলাহী চৌধুরী এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বিক্ষোভস্থলে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভ্যাট পরিশোধের প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেও ভিন্ন কথা বলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতি। সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন সন্ধ্যায় মোবাইলফোনে বলেন, ‘এটা জাস্ট একটা বুঝ দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। একটা চাইল্ডিশ (শিশুসুলভ বা শিশু বোঝানোর মতো) ঘোষণা মাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভ্যাট কোথা থেকে দেবে? তারা তো ছাত্রদের কাছ থেকে কালেকশন করেই জমা দেবে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে ভ্যাট আরোপ করে সরকারকে বিব্রত করা হচ্ছে। ভ্যাট কোনোভাবেই ছাত্র বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপ হতে পারে না। কেননা, শিক্ষা পণ্য নয়। তাই শিক্ষা গ্রহণকারী হিসেবে তা ছাত্রদের ওপর অর্পিত হতে পারে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইনত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাট আরোপের কারণে সমাজে একটা ইমব্যালেন্স সৃষ্টি করলো। এ কারণেই এ অস্থিরতা সৃষ্টি হলো।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সরকারি তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ভ্যাট প্রত্যাহার হবে না। বাজেট পাশের আগেই অতি উৎসাহী কিছু ভ্যাট কর্মকর্তা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাটের জন্য হানা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাজেট পাশের পরপরই বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ও করে। বিপরীত দিকে বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতি সংবাদ সম্মেলনে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন বৈঠকে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
এ অবস্থায় ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন অনেকটা ছাই চাপা ছিলো। কিন্তু হঠাত করেই গত বুধবার রামপুরায় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী কর্মসূচিকালে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ সেখানে গুলিবর্ষণ করে। এ ছাড়া লাঠিচার্জ আর টিয়ার শেল ছোড়া হয়। এতে আগুনে ঘি ঢালার পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত বুধবার যে আন্দোলন ঢাকার একটি অংশে ছিলো, তা বৃহস্পতিবার গোটা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে আন্দোলনকারীরা। অন্তত ৮টি পয়েন্টে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করে দিনভর বিক্ষোভ চালায়। এমনকি ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ফরিদপুরসহ দেশের যেসব জেলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানেই ছাত্ররা বিক্ষোভে রাজপথে নেমে পড়ে। তাদের এ আন্দোলনে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনও সমর্থন জানায়। বিবৃতি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি অ্যাকশনের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি ও সিপিবি। ছাত্রফন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ছাত্র ফেডারেশন আগামী রোববার সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট ডেকেছে।
পুলিশ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। আগের রাতে চারটি পয়েন্টে এ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা ছিলো। এগুলো হচ্ছে- সকাল ১০টায় ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে, বেলা ১১টায় উত্তরার হাউস বিল্ডিং মোড় ও বসুন্ধরা আবাসিক গেটে এবং দুপুর ১২টায় ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর ও বনানীতে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং সিলেটেও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল। নো ভ্যাট অন অ্যাডুকেশনের পক্ষে ফারুক আহমাদ আরিফ নামে একজন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের যেন বিস্ফোরণ ঘটে। নগরীর যেখানে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেখানেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলসহ বের হয়। এরপর তারা রাস্তায় বসে পড়ে। কুড়িল-রামপুরা ব্রিজ রোডেই চারটি অবরোধ তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো হচ্ছে রামপুরা ব্রিজের মুখে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, শাহজাদপুরে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নতুন বাজারে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম আর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে নর্থসাউথ ও ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবরোধ তৈরি করে।
রামপুরা ব্রিজ এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় রামপুরা-হাতিরঝিল-বাড্ডা-বনশ্রী এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গুলিস্তান, মালিবাগ, মতিঝিল থেকে যানবাহন এয়ারপোর্ট বা উত্তরামুখী হতে পারেনি। মহাখালী, বনানী ও কাকলী পয়েন্টে অবরোধের ধকল ঠেকে এয়ারপোর্ট, উত্তরা হয়ে টঙ্গী ছাড়িয়ে গাজীপুরে। কুড়িল-বিশ্বরোড বন্ধ থাকায় এ রুটের গাড়ির বিকল্প পথও বন্ধ ছিলো। এ এলাকায় অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিসহ অন্তত ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ কারণে গুলশান-১ নম্বর থেকে মহাখালী পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
দুপুর ১২টা থেকে উত্তরায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি, সান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। ফলে এয়ারপোর্ট থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ধানমণ্ডিতে রাস্তার একপাশে বসে বিক্ষোভ করছে স্টামফোর্ড, ড্যাফোডিল ও ল্যাবএইড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ কারণে নিউমার্কেট থেকে ধানমণ্ডি ২৭ পর্যন্ত দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। শ্যামলী মোড়ে আশা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় মিরপুর ও গাবতলী যাওয়ার রাস্তা বন্ধ রয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বন্ধ থাকায় পুরো রাজধানীই অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজধানীর আসাদ গেট, ধানমণ্ডি, সোবহানবাগ, শুক্রবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভকালে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই ভ্যাট বাতিলের দাবি করে।
এসব বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা নানা স্লোগান দেয়। ‘গুলি কর, ভ্যাট দেব না’, ‘শিক্ষা কোনো পণ্য নয়, তাই ভ্যাট মানি না’ ইত্যাদি। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফেস্টুনে ও রাজপথে প্রতিবাদী বিভিন্ন কথাও লিখেন। এরমধ্যে আছে- ‘আমার বাবা এটিএম বুথ নন’, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভ্যাটে’, ‘শিক্ষাই হাতির মেরুদণ্ড-শর্ত প্রযোজ্য’, ‘নোট ভ্যাট’ ইত্যাদি।
অর্থমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ও এনবিআরের ঘোষণা : উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেটে সংক্ষিপ্ত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘কিছুতেই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে না। তবে ভ্যাট ছাত্ররা দেবে না। ভ্যাট দেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।’ অর্থমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর সন্ধ্যায় এনবিআর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। এতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট শিক্ষার্থীদের দিতে হবে না বলে জানায় এনবিআর। এ ভ্যাট পরিশোধের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বলে সংস্থাটি ব্যাখ্যা দেয়। এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মুমেন স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করার জন্য নতুন করে ভ্যাট আরোপ করা হয়নি। বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভ্যাট বাবদ অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, কোনোক্রমেই শিক্ষার্থীদের নয়। বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত থাকায় টিউশন ফি বাড়ার কোনো সুযোগ নেই।’এনবিআরের এমন ঘোষণা অবশ্য শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছিল। এরপরই অদৃশ্য কারণে ব্র্যাক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বিক্ষোভস্থলে যান। তারা তাদের পক্ষ থেকেও ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা জানান।
পদে পদে ভোগান্তি : বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। ফলে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো আটকে থাকে সড়কে। তীব্র যানজটে আটকা পড়া কর্মব্যস্ত নগরবাসীকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, পরীক্ষার্থী, রোগী ও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আনা-নেয়াতে অন্তহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন রাজধানীবাসী। বাদ যাননি গর্ভবতী নারীও, হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়ে অবরোধে আটকা থাকতে হয়েছে ৪-৫ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগের নানা চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে মতিঝিলগামী দুটি বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে কোনো যাত্রী উঠানো হচ্ছে না। অন্যান্য একই সময়ে অর্ধশত বাস চলাচল করে এ স্ট্যান্ড থেকে। মহাখালী, বাড্ডা, গুলশানগামী কোনো বাস পাওয়া যায়নি। শত শত যাত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন পরিবহনের আশায়। কিন্তু কোনো পরিবহন নেই। পাচ্ছেন না কোনো রিকশা। হেঁটে কিছুদূর এগিয়ে দেখা গেছে, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড মসজিদ থেকে আসাদগেট পর্যন্ত গাড়ির জট লেগে আছে। অনেকে ১ ঘণ্টা ধরে বসে আছেন গাড়ির ভেতর। অনেক যাত্রীকে গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ রওনা করতে দেখা গেছে।
ঢাবির ওয়েবসাইট হ্যাকড: বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকার আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে। ‘সাইবার-৭১’ নামে একটি হ্যাকার গ্র“প ওয়েবসাইটটি হ্যাক করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওয়েবসাইটটিতে (http://www.du.ac.bd) প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
আন্দোলনকারীরা বিভক্ত: এদিকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছিল। এ সময় একটি অংশ অবরোধ তুলে নিতে চাইলে আরেক অংশ বিরোধিতা করে। এ নিয়ে দু পক্ষে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে মারামারি শুরু হয়। তখন কাছেই পুলিশ ছিলো। কিন্তু তারা ছিল নির্বিকার। মারামারি শুরু হলে ওই সড়কে থাকা গাড়িগুলো দিগি¦দিক যেতে থাকে। তবে ৫ মিনিটের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের একাংশ ফিরে আবার অবস্থান নেয় সড়কে। তখন অপর অংশ এসে অবস্থানকারীদের ধাওয়া দেয়।