বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র জেলা প্রশাসকের কাছে করলো লিখিত অভিযোগ : কোচিং ও মডেল টেস্ট বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার: কথিত মডেল টেস্ট ও কোচিং বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ভি.জে স্কুল এখন কোচিং বাণিজ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ক্লাসের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষকেরা কোচিং ক্লাস করতে তাদের বাধ্য করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা এবং বিকেল ৩টার দিকে কোচিং ও মডেল টেস্ট পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে পৃথকভাবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। এর আগে তারা স্কুলের সামনের রাস্তা কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করে রাখে বলে জানায়। পরবর্তীতে ছাত্ররা জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দশম শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র অভিযোগ করে বলেছে, অবৈধ ‌কোচিং করতে আমরা রাজি না হওয়ায় শিক্ষক হাফিজুর রহমান আমাদের বেত দিয়ে মারধর করেন এবং কোচিং করতে বাধ্য করেন। যদি স্কুলে এসে কোচিং করতে হয় তাহলে আমরা স্কুলে আসবো না। আমরা স্কুলে আসি অন্যান্য স্কুলের ছাত্রদের মতো পড়াশোনা করতে, কোচিং করতে নয়। আমাদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে শিক্ষকেরা কোচিং করান। আমাদের প্রথম শিফটের ছাত্ররা যখন কোচিং করছে তখন দ্বিতীয় শিফটের ক্লাস হচ্ছে। আবার দ্বিতীয় শিফটের ছাত্ররা যখন কোচিং করছে তখন প্রথম শিফটের ছাত্রদের কোচিং করানো হচ্ছে। কোচিং করতে রাজি না হওয়ায় অস্টম শ্রেণির ছাত্র সানিকে শিক্ষক জাকির হোসেন বেত দিয়ে মারধর করেন। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণিতে ইংরেজি পরীক্ষা নেয়ার নামে শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে ১০ টাকা করে তোলেন। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে পরীক্ষা নেননি তিনি। প্রধান শিক্ষক নোটিস দিয়েছেন পরীক্ষা হবে না; কিন্তু পরীক্ষার জন্য তোলা টাকা ছাত্রদের ফেরত দেয়া হয়নি। কোচিং করলে বেশি নম্বর পাওয়া যাবে বলেও কয়েকজন শিক্ষক নানাভাবে তাদের আকৃষ্ট করেন। কিন্তু গরিব শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো কোচিং ফি দিতে পারে না। ফলে অভিভাবকমহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক সচেতন ব্যক্তি বলেছেন কোচিং করানো সরকারি নীতিমালা বহির্ভূত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক নূর-ই-আলম মোর্শেদা বলেন, সরকারি নীতিমালায় না থাকলেও ছাত্রদের লেখাপড়ার মান ভালো করার জন্য কোচিং করানো হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন কলেজ থেকে শিক্ষক এনে কোচিং করাচ্ছি। কোন কোন কলেজের শিক্ষক কোচিং ক্লাস নিচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলা যাবে না। কারণ তাদের ক্ষতি হবে। প্রসঙ্গত, সরকারি বিধি অনুযায়ী বছরে দুটি পরীক্ষা অর্থাৎ অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়া নেয়া যাবে না। কিন্তু ভি.জে স্কুল মডেল টেস্টের নামে বাড়তি একটি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ হন অনেক অভিভাবক। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ছাত্রদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্ত সাপেক্ষে এবং আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলা প্রশাসনের আরেকটি সূত্র জানায়, যেহেতু পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তাই তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মডেল টেস্ট আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর রোববার শুরু হবে। আর আবেদনের প্রেক্ষিতে নবম শ্রেণির মডেল টেস্ট হবে মাসখানেক পরে। এ ব্যাপারে স্কুলসূত্র জানায়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রদের মডেল টেস্ট ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। তাই তাদেরকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।