স্টাফ রিপোর্টার: দিনভর শান্ত থাকার পর বিকেলে আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর। পাল্টাপাল্টি মহড়া আর সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণের মধ্যে একরকম ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। আবার কী হয়, কী হতে যাচ্ছে এমনই আতঙ্ক ছিলো সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে আবার দুটি অপ্রীতিকর ঘটনায় শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
গত রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে তোলে। দিনভর ভালোই ছিলো। কিন্তু গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুবলীগ নেতা আলমগীর আজম খোকার বাড়িতে সন্ধ্যা ৭টার একদল যুবক সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় তার বাড়িতে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ করেন খোকার মা ছায়েরা বেগম। হামলাকারীরা তাকে কুপিয়ে জখম করে। বাড়ির দুটি আলমারি, টিভি, ফ্রিজ, সোনার চেন, আংটিসহ টাকা পয়সা লুটপাট করে। ছায়েরা বেগমকে রক্তাক্ত অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খোকার পাশের তপনের ভাড়াবাড়িতেও হামলা চালায় যুবকরা। এ ঘটনায় তপনের দাদি নীলিমা চট্টপাধ্যায়ও আহত হন। তাকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে চুয়াডাঙ্গায় জিপুর সমাবেশে আসার সময় চুয়াডাঙ্গার ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সদর উপজেলার কোটালি গ্রামের ৪ যুবককে কুপিয়ে জখম করা হয়। এদের তিনজনকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। জেলা শহরের কয়েকটি প্রধান সড়ক ও হাসপাতাল এলাকায় যুবকদের মহড়া দিতে দেখা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর আজম খোকাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন ও যুবলীগের সদস্য মিজুকে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী দ্বারা আহত করার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আ.লীগের দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক খুস্তার জামিল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা জজ কোর্টের পিপি শামশুজ্জোহা ও জেলা আ.লীগের উপপ্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস। এ ছাড়া সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা যুবলীগের অন্যতম নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান, যুবলীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল কাদের, যুবলীগ নেতা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, গোলাম মোস্তফা লালা, সাবেক জিএস রাশেদুজ্জামান বাকী, চিৎলা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা দিপু, তারেক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আব্দুর রশিদ, সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম, সাবেক ছাত্রনেতা ও যুব নেতা মির্জা গালিব, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আল ইমরান শুভ, চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, যুগ্মসম্পাদক শফি উদ্দীন টিটু, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আশিক ইকবাল স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক তানিম হাসান তারেক। উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান, ক্রীড়া সম্পাদক ফিরোজ জোয়ার্দ্দার, সহসম্পাদক ফয়সাল খাঁন, স্কুল ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাজু আহম্মেদ, কলেজ ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্য খালিদ মাহামুদ, পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি জাবিদুল ইসলাম জাবিদ, রুবেল, বেজীও, রিস্তাক, তুহিন, সঞ্চয়, সাব্বির, সদর থানা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানা, সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা, সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মানিক, আলুকদিয়া ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা রিন্টু জোয়ার্দ্দার, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জিম, শিমুল, মালেক, আসাদ, মামুন, রোকন, আলহিম, মাছুম, রাকিব, রেজওয়ান, শুভ, সোহাগ, রানা, হামিদ, মমিন, রানা, মানা, কলিন্স, জুয়েল, আলিফনুর, ইসরাইল, যুবলীগ নেতা হাপু, আরিফ, লিপ্টন, সুমনসহ জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, যুবলীগ নেতা আলমগীর আজম খোকাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মিজুর ওপর যারা সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং শান্ত চুয়াডাঙ্গা অশান্ত করার চেষ্টা করছে, সে সকল চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন। অন্যথায় চুয়াডাঙ্গা আ.লীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতকর্মীরা জননেতা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের দিকনির্দেশনায় বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি দেবে এবং চুয়াডাঙ্গাকে অচল করে দেয়া হবে। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জেলা যুবলীগের অন্যতম নেতা শামীম আহমেদ সুমন।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ হোসেন দুদু অপর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিমুর ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন তারা। চুয়াডাঙ্গা কেদারগঞ্জ নতুন বাজার থেকে বেলা ৫টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ হোসেন দুদুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ হাসান চত্বরে সমাবেশ করে। দুদুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তৃতা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, সাবেক সহসভাপতি অ্যাড. ফিরোজ, দফতর সম্পাদক মতি, জেলা যুবলীগের সদস্য মিলন, রাজ্জাক, বিপ্লব, থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বুলবুল, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইমরান আহমেদ বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান কাজল, শিক্ষা ও পাঠ্যচক্র সম্পাদক ভুলন, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি শরীফ উদ্দিন, তরিকুল ইসলাম তারেক, যুগ্ম সম্পাদক ফরিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ফরিদ আহমেদ, সমাজসেবা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম পারভেজ সজল, সহসভাপতি হাসান, জাহাঙ্গীর, যুগ্ম সম্পাদক মাফি, দফতর সম্পাদক তাপু, কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জানিফ, বিপ্লব, প্রচার সম্পাদক জাকি, জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সজল, শান্তি, রাজা, জীবননগর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সোয়েব আহমেদ অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম রাজা, জীবননগর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক রুবেল, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক, দামুড়হুদা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জামিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাজু আহমেদ রিংকু, দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ববি, সাধারণ সম্পাদক মামুন, দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদ পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক তপু ও দামুড়হুদা ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্মআহ্বায়ক এমএ করিম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগ নেতা ডেবিড, হাসিবুল, রাকিব, মন্টা, তাওরাত, কানোন, অনিক, ইমরান, সেবদুল, আকিব, মিলন, আলামিন, জনি, সাওন, প্লাবন, পিয়াস, ফয়সাল, শাকিল, মারুফ, ওয়াসিম, সবুজ, টুটুল, তুষার, বাবু, রাব্বি, লিমন, লিংকন, জজ, আরিফুল, খাইরুল প্রমুখ। সমাবেশে ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, যারা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিমুর ওপর হামলা করেছে তারা আর যাই হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করে না। তিনি হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জিপুর সমাবেশে যোগ দিতে আসার সময় কোটালী গ্রামের হাসানের ছেলে খালিদুল, ওমর আলীর ছেলে মুরশিদ, বক্সের ছেলে রাজ্জাক ও খাজার ছেলে সাদ্দামকে চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। বক্তারা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেই সাথে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ হোসেন দুদু স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যুবলীগ নেতা খোকার বাড়িতে যারা হামলা চালিয়েছে তারা আমাদের দলের কেউ নয়। সমাবেশটি পরিচালনা করেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ফরিদ আহাম্মেদ।
প্রসঙ্গত, গত রোববার বিকেলে জেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য আলমগীর আজম খোকা ও যুবলীগ সদস্য মিজু শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন। রাত পৌনে ৮টার দিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানজিলুর রহমান চৌধুরী সিমুকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপর থেকেই শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সকাল থেকেই জেলা শহরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকলেও ঘটে হামলার ঘটনা।