পাঁচটি অবৈধ মিটার জব্দ : চারজনের জরিমানা

অবশেষে টনক নড়েছে গাংনী পল্লী বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তার

 

গাংনী প্রতিনিধি: অবশেষে টনক নড়েছে মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের কর্মকর্তার। গতকাল শনিবার এক অভিযানে হিন্দা গ্রামে দালালদের দেয়া অবৈধ ৫টি সংযোগের মিটার জব্দ করা হয়েছে। ভুয়া সিএমও’তে সংযোগ নেয়ার অপরাধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল আমিনের ভ্রাম্যমাণ আদালত চারজনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করেছেন। ঘটনার সাথে জড়িত পাঁচ দালালের বিরুদ্ধে নিময়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কনজুর্মাস মিটার অর্ডার (সিএমও) জাল করা ও কোনো কাগজপত্র ছাড়াই দালালরা মিটার স্থাপনের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের গত মাসের সভায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ডিজিএম। এছাড়াও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর অবশেষে অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, জাল সিএমও এর মাধ্যমে মিটার স্থাপন করে বিদ্যুত ব্যবহার করার অপরাধে হিন্দা গ্রামের ইউনুছ আলী ও জুয়ের রানার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে এবং সেলিম হোসেন ও বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়। ওই চারজনসহ আরো একজনের বাড়ি থেকে পাঁচটি মিটার এবং সার্ভিস ড্রপসহ আনুসাঙ্গিক মালামাল জব্দ করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের খবর পেয়ে অবৈধ মিটার স্থাপন করা বাড়ির লোকজন পালিয়ে যায়। অভিযানে এরকম তিনজনের বাড়ি থেকে ভুয়া বিলের কাগজও জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভুয়া মিটার স্থাপন হওয়া গ্রাহক সূত্রে জানা গেছে, হিন্দা গ্রামের জুয়েল, রিন্টু, সালাম, সাহারুল ও মাহবুবু নিজ গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের দালাল হিসেবে চিহ্নিত। তারা বিদ্যুত সংযোগ প্রত্যাশী মানুষের কাছ থেকে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেছে। মৌখিক চুক্তিতে এসব লোকজনের বাড়িতে টাকা নেয়ার দুয়েক দিনের মধ্যেই মিটার স্থাপন করা হয়। স্থানীয় ওই পাঁচ দালালদের পরিচিত গাংনীর এক চিহ্নিত দালাল। ওই দালাল পল্লী বিদ্যুত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে ভুয়া সিএমও দিয়ে জোরপূর্বক মিটারগুলো লাগিয়ে নেন। তবে তার নাম সংযোগ প্রত্যাশীরা জানেন না বলে দাবি করেন। তারা জানান, গ্রামের ওই পাঁচজনের মাধ্যমে লেনদেন ও মিটার পেয়েছেন। টাকা নেয়ার দুয়েক দিনের মধ্যে কীভাবে মিটার স্থাপন করা হয় তা নিয়ে এলাকায় রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আবেদনের পর দীর্ঘদিন ধরে পল্লী বিদ্যুত অফিস ঘুরে চলতি বছরের মাঝামাঝি সমযে মিটার পেয়েছেন বেশির ভাগ নতুন গ্রাহক। অথচ দালালদের টাকা দিলেই মিলছে সোনার হরিণ সেই মিটার। আবেদনের সমীক্ষা, ওয়্যারিং ইন্সপেকশন, মিটার ডিপোজিটসহ জমাসহ সময় সাপেক্ষ কয়েকটি ধাপের কাজ কীভাবে দুয়েক দিনের মধ্যে সম্পন্ন হচ্ছে তার জবাব দিতে পারছেন না পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন জানান, ভুয়া কাগজপত্রে যে সমস্ত মিটার স্থাপন করা হয়েছে তা পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ শনাক্ত করবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মিটার জব্দ ও জেল-জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বিদ্যুত যাতে গ্রাহকরা ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। পল্লী বিদ্যুত অফিস দালালমুক্ত করতেও অভিযান শুরু হচ্ছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, গাংনী জোনাল অফিস হচ্ছে দালালদের আখড়াবাড়ি। দালালদের দৌরাত্ম্যে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন নিগৃহীত তেমনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নতুন সংযোগ প্রত্যাশীরা। অফিসে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন ও গাংনী থানা থেকে বারবার সহযোগিতা করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। তবে একটু পরে হলেও পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের ঘুম ভেঙেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে পল্লী বিদ্যুত অফিস দালালমুক্ত ও সকল অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।

ডিজিএম আবু আনাস মো. নাসের জানান, সম্প্রতি কয়েকজন দালাল রাজনৈতিক পরিচয়ে নতুন সংযোগ প্রত্যাশীদের নানা প্রলোভনে ফেলে ১০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে অবৈধভাবে সংযোগ মিটার স্থাপন করে। এমনকি অফিসের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করেও কাগজপত্র তৈরি করা হয়। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অনুরোধ করা হয়। গাংনী জোনাল অফিসের আওতায় আরো কয়েকটি স্থানে এমন অবৈধ সংযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওইসব মিটার জব্দপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দালাল নির্মূলে পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে আরো উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম (টেকনিশিয়ান), শামীম পারভেজ, গাংনী জোনাল অফিসের ডিজিএম আবু আনাস মো. নাসের, এজিএম রেজাউল করিম ও হিন্দা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ নাজিম উদ্দীন।