সোনালী আঁশে বেড়েছে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ

চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ জনপদে চলছে পাট কাটা জাগ দেয়া আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর উৎসব

 

জহির রায়হান: চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ জনপদে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ এবং বাজারে চাহিদা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে পাট চাষের পরিধি বেড়েছে। জমি এবং জলাশয় ও এর পাড় সংলগ্ন স্থানগুলোতে পাট কাটা, পাট জাগ দেয়া, পাটের আঁশ ছাড়ানো, পাট শুকানো, পাটকাঠির পালা নিয়ে কর্মযজ্ঞ দেখে মনে হয় গ্রামীণ জনপদে এখন চলছে পাট উৎসব। সোনালী আঁশ ফিরিয়ে আনছে চাষিদের সুদিন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৮ হাজার ১শ ৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরে ১৫শ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ৫শ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৭ হাজার ৩শ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১৮শ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলায় পাট বেশি চাষ হয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার দলকালক্ষ্মীপুর গ্রামের কয়েক কিলোমিটার রাস্তার পাশে দলকা বিলে, নতিপোতা, কালিয়াবকরি, দুলালনগর, করিমপুর, বেড়বাড়ি, হেমায়েতপুর, চারুলিয়া, ছাতিয়ানতলাসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ভৈরব নদীতে, মরাগাং বিলে ও আশ পাশের ডোবাতে শতাধিক চাষি পাট পচানো ও আঁশ ছাড়ানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এছাড়া আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী, হাঁপানিয়া, রুইথনপুর, চিৎলা, কুলপালা, গোপিনাথপুর, গোপিনগরসহ বিভিন্ন গ্রামে পাট জাগ দেয়া ও পাটের আঁশ ছাড়ানো কাজে চাষিদের ব্যাপক ব্যস্ততা পরিলক্ষিত হয়।

আঁশ ছাড়ানো কাজে নিয়োজিত কুলপালা গ্রামের চাষি ভোলা মল্লিক জানান, পাট চাষ করতে বিঘা প্রতি সব মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়। গত বছর পাট মণ প্রতি ১৩শ টাকা বিক্রি হয়েছিলো। এ বছর বাজারে মণ প্রতি ১৪শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি। রাস্তার দু ধারে বাঁশের আড়া টানিয়ে, কালভার্টের রেলিং কিংবা গৃহস্থ বাড়ির চারপাশ- সর্বত্রই চলছে পাট শুকানোর কাজ। এসব এলাকাজুড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে পাটকাঠির বোঝা সমৃদ্ধির জানান দিচ্ছে। চারদিকে যেন শ্বেতসুন্দর পাট উৎসব। দলকালক্ষ্মীপুরের স্বপন জোয়ার্দ্দার তার সাত বিঘা জমিতে এবার পাট চাষ করেছেন। দলকা বিলে পাট ছাড়ানো শ্রমিকদের কাজ তদারককারী স্বপন জোয়ার্দ্দার বলেন, এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় পাট পচানোর সুবিধা হয়েছে। আশা করি বিঘা প্রতি আট মণ করে ফলন পাবো।

দামুড়হুদা উপজেলার নতিপোতা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক জানান, এবার এলাকায় আশানুরূপ পাট চাষ হয়েছে। পাট চাষের জন্য দো-আঁশ ও পলি মাটি বিশেষ উপযোগী। ফসলের রোগ বালাই, পোকা মাকড়, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসল উৎপাদন, উন্নতমানের বীজ, সার, কীটনাশক প্রয়োগ পদ্ধতিসহ কোথায়, কীভাবে, কার মাধ্যমে বিক্রি করলে পাটের ভালো দাম পাওয়া যায় এসব বিষয়ে চাষিদের সচেতন থাকতে হবে। চাষিদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সময়মতো ও আধুনিক পদ্ধতিতে পাট উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান ও বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষায় ধারণা দেয়া হয়।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা কম। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামে পাট চাষ বেশি হয়েছে। মাখালডাঙ্গা গ্রামের চাষি আসলাম জানান, জমিতে গম বা ডাল উঠে যাওয়ার পর আমন মরসুমের আগে পাট চাষ করা হলে জমি অনাবাদী থাকে না। চৈত্র মাসের মধ্যে পাট বীজ বোনা হলে আগাম পাট কেটে খুব সহজেই আমন মরসুম ধরা যায়।

জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের চাষি মোতালেব আলী জানান, বিগত কয়েক বছরে কৃষকদের মাঝে পাট চাষে আগ্রহ কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ বছর পাট চাষে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। যেমন বিছা পোকায় পাট গাছের নানা ক্ষতি সাধন করছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নির্মল কুমার দে জানান, পরিবেশ বান্ধব বলেই পাটের বহুমুখি ব্যবহার হচ্ছে। এর ফলে দেশে ও বিদেশে পাটের চাহিদা বাড়ছে। বাড়তি মূল্য পাওয়ার কারণে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় পাট চাষে তারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি জ্ঞানে কৃষকদের এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ সবসময় কৃষকদের পাশে থাকবে।