গাংনীর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আবারো সেই মহুরারদের সিন্ডিকেট!

উপরি দিলেই অনিয়ম যেখানে হয়ে যায় নিয়ম

 

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সেই মহুরাররা আবারও সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির এক পর্যায়ে গণআন্দোলনের মুখে সিন্ডিকেট ব্যবসা ২/৩ বছর বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয়েছে সেই পুরাতন ব্যবসা। এমন অভিযোগ করে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে উপরি দিলেই সব অনিময় নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। মহুরার নজরুল ইসলাম, ফাকের আলী, দিনাজ উদ্দীন, পিন্টু মিয়া, রজবুল ও ইদ্রিস আলী রয়েছেন সিন্ডিকেটে। উপরি টাকার ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন বশির উদ্দীন ও নাইটগার্ড মহিবুল ইসলাম। তবে সাব-রেজিস্ট্রার জানালেন, বাইরে কি হয় জানি না, তবে ভেতরে কোনো দুর্নীতি নেই।

ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কয়েকজন জানান, এখন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস নজরুল ইসলাম-ফাকের আলীর সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তাদের সিদ্ধান্তে চলতে হয় অন্যান্য মহুরারদের। জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নেয়া হয় অধিকহারে টাকা। তাদের অনেকেই জানেন না জমি রেজিস্ট্রির প্রকৃত সরকারি ফিস ও অন্যান্য খরচ। সিন্ডিকেট নির্ধারিত দরদামেই রেজিস্ট্রির অর্থ পরিশোধ করতে হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার সপ্তায় একদিন গাংনী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। এ কারণে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা মানুষের ভিড় পড়ে বৃহস্পতিবারে। অন্য দিন রেজিস্ট্রি না থাকায় মানুষের মাঝে ব্যস্ততা থাকে। যেকোনো মূল্যে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করতে চান অনেকেই। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় মহুরার সিন্ডিকেট। এখানকার দলিল লেখক ও অসাধু কর্মচারীরা ডিআর’র অডিট ব্যয়, নজরানা ও দলিল ফাইলিঙের নামে দলিল প্রতি ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করছেন। এছাড়াও দলিলে স্বাক্ষর বা টিপসহি দিতে ২০ টাকা ও আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ জনপ্রতি ২০ টাকা করে নেয়া হয়। যে টাকার কোনো রসিদ দেয়া হয় না। এসব টাকা আদায়ের দায়িত্বে রয়েছেন অফিসের পিয়ন বশির ও নাইটগার্ড মহিবুল। ওই টাকাগুলো সাব-রেজিস্ট্রারসহ কর্মচারীরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। জমা হওয়া টাকা নিয়ে অফিস শেষে সন্ধ্যার পর ভাগবাটোয়ারা করতে বসেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। মহুরার ও অফিসের কয়েকজনের মধ্যে নির্ধারিত হারে ভাগ করা হয়।

অপরদিকে দিকে জমির নামজারি না হলেও ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। এছাড়াও জমির শ্রেণি বদল করেও হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। জমি নামজারি করা হলে জমির মূল মালিকের নামে পৃথক হোল্ডিং করা হয়। হোল্ডিং খোলা হলে সরকার সাড়ে ১১শ টাকা পায়। নাম খারিজ না করায় সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গাংনী সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নানা অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকারি নিয়মানুযায়ী পৌর মেয়র সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মূল ফটকে জমির মূল্যের ওপর করের পরিমাণের তালিকা লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। তালিকানুযায়ী ইউনিয়নের কৃষি জমি ৭%, অকৃষি জমি ৮%,পৌর সভার মধ্যে ২%, প্রিন্টসহ হলফনামা বাবদ ৩০০ টাকা, ই-এ-এন বাবদ ২২৫ টাকা, পে-অর্ডার, নোটিস বোর্ড ফিস বাবদ ২০০ টাকা ও দলিল লেখকদের লেখা খরচ বাবদ ৮২৫ টাকা উল্লেখ থাকলেও দলিল লেখকদের সেই অলিখিত সিন্ডিকেট নানা কারণ দেখিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন।

শিশিরপাড়ার বিশিষ্ট ঠিকাদার আতিয়ার রহমান বান্টু জানান, তাদের শরিকানা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা চাইলে তিনি প্রতিবাদ করেন। এ সময় মহুরার নজরুল ইসলাম তাকে নিবৃত করেন ও প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রলোভন দেখান। এতে তিনি রাজি না হয়ে দুর্নীতি বন্ধের দাবি তোলেন। প্রতিদিনই তার মতো অনেকেই এমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি। সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে তিনি সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ক্রেতা-বিক্রেতার সমস্যার কথা বিবেচনা করে খারিজ ছাড়া অনেক সময় দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। এক্ষেত্রে যে দলিল লেখক এটি করে থাকেন তার ওপর নির্ভর করে টাকার অঙ্ক। বিভিন্ন সময়ে অডিট ছাড়াও নানা কারণে টাকা লাগে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে গাংনীতে ৪৫ জন নিবন্ধিত দলিল লেখক রয়েছেন। গাংনী উপজেলা সাব রেজিস্টার আব্দুর রউফ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, হাল দাখিলা ও জমি খারিজ না করা হলে রেজিস্ট্রি করা হয় না।