লতিফের রণেভঙ্গ

 

স্টাফ রিপোর্টার: পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি পদে থাকার লড়াইয়ে রণভঙ্গ দিয়েছেন। হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে মামলায় হারার পর অবশেষে তিনি সংসদ সদস্যর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানিতে এসে তিনি এ ঘোষণা দেন। লতিফ বলেন, আমার নেতা চান না আমি এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করি। আমি আর এ মামলায় লড়তে চাই না। আমি কমিশনকে বলেছি, আজকের এই শুনানি মুলতবি করা হোক। সংসদ সদস্য পদ রক্ষার জন্যে আর বৃথা লড়াই করব না। সংসদ সদস্য পদ নিয়ে লড়বার মতো দুর্বল মানসিকতা আমার নেই। আমি জাতীয় সংসদের স্পিকারের বরাবরে আমার পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেবো।

এর আগে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানিতে অংশ নেয়ার চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। গত ২০ আগস্ট আবেদনটি খারিজ করে দিলে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন তিনি। গতকাল সকালে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শুনানির নোটিস আপিল বিভাগও স্থগিত না করায় খারিজ করে দেয়া হাই কোর্টের আদেশই বহাল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ইসির শুনানিতে অংশ নিয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন তিনি। মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও লতিফের এ শুনানি হয়। শুনানি শেষে সিইসি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী সেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন কিভাবে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় তা সংবিধানে বলা রয়েছে। তিনি তা মেনেই কাজ করবেন আশা করি। শুনানি মুলতবি ঘোষণা করে তিনি বলেন, শেষে দু সপ্তাহের মধ্যে বিতর্ক নিষ্পত্তির বিধান থাকায় এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তও পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি।

গতকাল ইসির সম্মেলন কক্ষে নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নেন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার। এ সময় ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, আইন শাখার যুগ্মসচিব মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনে আসেন লতিফ সিদ্দিকী। এ সময় আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়াও তার সাথে ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বয়ং উপস্থিত না থাকলেও তার প্রতিনিধিত্ব করেন দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার ও সাইফুদ্দিন খালেদ।

শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, লতিফ সিদ্দিকী পদত্যাগ করে তার সমস্যার সমাধান করবেন এবং এজন্য সময়ের প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। এজন্য তিনি দু সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদনও করেছেন। তার শুনানি মুলতবির আবেদন গ্রহণ ও মঞ্জুর করে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন শুনানিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময়ের মধ্যে পদত্যাগ করলে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ নেওয়াজ বলেন, এর মধ্যে তিনি যদি পদত্যাগ করেন, আইন মেনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছেই করতে হবে। পদত্যাগের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য আসলে আমরা ৬ সেপ্টেম্বরই সিদ্ধান্ত নেবো।

শুনানিতে প্রথমে লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সাচ্চা মুসলমান, আমি জন আস্থায় বিশ্বাস করি। জনতার আদালতে আমি গিয়েছি। আমি সংসদ সদস্য। আইনগতভাবে ও সাংবিধানিকভাবে সংবিধানের ৬৬ (৪) অনুযায়ী আমার বিষয়ে স্পিকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় আমাকে হাইকোট-সুপ্রিমকোর্টে যেতে হয়েছে। নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে লতিফ জানান, তিনি বহুবার বহিষ্কৃত হলেও এমনটা আগে কখনো হয়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমি আনন্দের সাথে, নির্লিপ্তভাবে ঘোষণা করছি- আমি টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবো। এটা আমার ঘোষণা, আমার সিদ্ধান্ত।

শুনানিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে দলের সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছারকে বক্তব্য দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ডায়াসে দাঁড়িয়ে এ আইনজীবী বক্তব্য দেয়ার শুরুতেই বলেন, উনি (লতিফ) তো পদত্যাগের কথা বলছেন। এখন কি আমাকে আর কিছু বলতে হবে? এ সময় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ তার উদ্দেশে বলেন, আপনি আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করুন। উনি (লতিফ) তো পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তখন নিজের আসন থেকে দাঁড়িয়ে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত বলেছি। আমি সংসদে গিয়ে স্পিকারকে তা জানাব। এ সময় আওয়ামী লীগের আইনজীবী কাউছার বলতে থাকেন, নির্বাচনী আইন ও সংবিধান অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর আর সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকার সুযোগ নেই। তার সদস্য পদ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। এরপরেই লতিফ সিদ্দিকী সহাস্যে ডায়াসে গিয়ে আওয়ামী লীগের দাবির সাথে একমত পোষণ করেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাতে কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক। ইসি জানতে চায়, আওয়ামী লীগের দাবির সাথে সহমত পোষণ করেন কি-না। লতিফ বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সদস্য পদ বাতিল চেয়েছে। আমার তো আর কিছু করার নেই, তাদের সাথে একমত। তাই তো স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।

শুনানি থেকে বের হয়ে লতিফ সিদ্দিকী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার হয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বিলম্ব হয়েছে। আমি অবগত ছিলাম। আমার নেতা চান না আমি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। সংসদ সদস্য পদ নিয়ে তার কোনো লোভ নেই বলে জানান তিনি।