বাদ পড়ছে ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাব

নতুন পে-স্কেলে থাকছে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড

 

স্টাফ রিপোর্টার: নতুন অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোয় টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে পাঁচ শতাংশ হারে প্রতিবছর বেতন বাড়ানোর নতুন প্রস্তাবটি রাখা হচ্ছে না। এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা। পে-কমিশন ও সচিব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়েই নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিলো সরকার। কিন্তু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাপের মুখে সরকার নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উল্লিখিত দু সুবিধা বহাল রেখে সারসংক্ষেপ তৈরি করছে। এ জন্য গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সন্ধ্যার পরও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ে কঠোর গোপনীয়তার মাধ্যমে এ নিয়ে কাজ করেছেন। এখন ওপরের নির্দেশ পেলেই আগামী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদনের জন্য সেটি উপস্থাপন করা হবে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মঙ্গলবার বলেছিলেন, প্রস্তাবিত পে-স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিষয়টি নতুন করে ভেবে দেখা হবে। তিনি আরও বলেছেন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড এক সাথে রাখার পক্ষে নই। এর মধ্যে যে কোনো একটি বাদ দেবো। বিষয়টি নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে।

উল্লেখ্য, অষ্টম জাতীয় পে-কমিশন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের সুপারিশ করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। নতুন বেতন পে-স্কেল পর্যালোচনা সংক্রান্ত সচিব কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে কমিশনের সুপারিশ বহাল রাখেন। ১৪ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।

নতুন পে-স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল হচ্ছে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সচিবালয়সহ সারাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনগুলোর (নন-ক্যাডার) পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। একই সাথে বেশ কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও বেতন পর্যালোচনা কমিটির সভাপতির সাথে দেখা করে তারা তাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা জানায়। আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতারা অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের কাছে এ সুবিধা দুটি বহাল রাখার অনুরোধ জানান।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদিকে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিলে প্রশাসনে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। এরপরও সরকার টাইম স্কেল ও সিলেকশন বাদ দিয়ে নতুন পে-স্কেল অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে তোলার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলো। কিন্তু আন্দোলনের চাপের মুখে সরকার কিছুটা নমনীয় হয়ে ওঠে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

উল্লেখ্য, ৩ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ২৪তম বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের ৩০৫ কর্মকর্তার সিলেকশন গ্রেড প্রদান করা হয়। শেষ সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যাপারে ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী এক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জাকারিয়া হাসান শুক্রবার জানান, অর্থমন্ত্রী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে ভাববেন এ কথা বলেছেন। আমরা এ বিষয়টি ইতিবাচক বলে মনে করছি। কিন্তু এ দু সুবিধার মধ্যে একটি বাদ দেয়া হলেও অনেকে বঞ্চিত হবেন এ সুবিধা থেকে। এটি মোটেও কাম্য হবে না।

টাইম স্কেল: সাধারণত কোনো চাকরিজীবী ১৫ বছরেও কোনো কারণে পদোন্নতি না পেলে সেক্ষেত্রে ৮ বছর পর ১টি, ১২ বছর পর ১টি এবং ১৫ বছর পর আরও ১টি করে মোট ৩টি টাইম স্কেল পেয়ে থাকেন। প্রতিটি টাইম স্কেল পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীর বেতন স্কেল এক ধাপ ওপরে উন্নীত হয়। এটি টাইম স্কেল নামে পরিচিত। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পদোন্নতি না পেলেও আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিশেষ করে সরকারি চাকরির ৬৫ শতাংশই ব্লকপোস্ট রয়েছে। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ নেই। তারাই মূলত এর সুবিধাভোগী। ১৯৮১ সালে ক্যাডার সার্ভিসে টাইম স্কেল চালু হলেও ১৯৮৩ সালে তা নন-ক্যাডার পদেও চালু হয়।

সিলেকশন গ্রেড: পদ না থাকা বা ভিন্ন কোনো কারণে একই স্কেলে সন্তোষজনকভাবে দীর্ঘদিন চাকরির পর অনেকে পদোন্নতি পান না। এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তিকে কিছু শর্তসাপেক্ষে উচ্চতর স্কেল প্রদান করা হয়। এ পদ্ধতিকে সিলেকশন গ্রেড বলা হয়। সত্তর দশকে এ পদ্ধতি চালু হয়।

নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ বেতন থাকছে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন আট হাজার ২৫০ টাকা। তবে মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিবের বেতন ৯০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং সিনিয়র সচিবের বেতন ৮৪ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার আগেই জানিয়ে রেখেছেন যখনই ঘোষণা আসুক না কেন এ বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন কাঠামোতে বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।

চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু বেতন দেয়া হবে, ভাতাসহ অন্য সুবিধা দেয়া হবে পর্যায়ক্রমে। এর আগে সপ্তম বেতন কাঠামোও কয়েক ধাপেই বাস্তবায়ন করা হয়েছিলো। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতাসহ সার্বিক বিষয়ে বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর চেয়ে পাঁচ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়েছে চলতি অর্থবছরের বাজেটে।