আবারও চুরির অভিযোগে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহত লাঠি ও মোটরসাইকেল জব্দ : ৪ জন আটক

 

স্টাফ রিপোর্টার: আবারও চুরির অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মোবাইলফোন চুরির অভিযোগে রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর রাজা মিয়াকে (১৭) পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গতকাল সোমবার সকালে হাজারীবাগ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আরজু ওই কিশোরকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে তার নিজ বাসায় পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে। এ ঘটনায় থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আরজুসহ চারজনকে আটক করেছে ৱ্যাব ও পুলিশ।

হাজারীবাগ থানার ওসি কাজী মাঈনুল ইসলাম জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডটি আরজুর বাসাতেই ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত লাঠি ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে থানায় মামলা না হলেও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

নিহত রাজার ফুফু রত্না অভিযোগ করেন, থানা ছাত্রলীগ সভাপতি আরজুর বাসা থেকে গত রোববার মোবাইলফোনসহ কিছু জিনিস চুরি হয়। এরপর থেকে আরজু সন্দেহ করতে থাকে রাজাকে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় আরজুর লোকজন রাজাকে গণকটুলীতে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর গণকটুলী এলাকায় ৪৫/৪ নম্বর তিন তলা বাসার নিচ তলায় তাকে বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানায়, হাজারীবাগের ৪৬ নম্বর গণকটুলীর বাসায় পরিবারের সাথে থাকতো রাজা। ওই বাসার অদূরেই ছাত্রলীগ নেতা আরজুর বাসা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আরজু ও তার ১০-১৫ জন অনুসারী কিশোর রাজাকে ধরে নিয়ে যায়। প্রথমে আরজু তার বাসাতেই রাজাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে রাজাকে নিয়ে তারা হারানো মোবাইলফোন উদ্ধারের নামে বিভিন্ন স্থানে যায়। মোবাইলফোন ফেরত না পেয়ে তাকে আবারো বেধড়ক মারধর করার এক পর্যায়ে রাজা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাসার সামনের রাস্তায় ফেলে রাখে। পরে রাজার পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

চিকিত্সাধীন অবস্থায় বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। নিহতের সুরতহাল প্রস্তুতকারী হাজারীবাগ থানার এসআই রেজাউল জানান, নিহত কিশোরের কপালের বাম দিকে গভীর কাটা দাগ রয়েছে। এছাড়া তার সারা শরীর জুড়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে।

হাজারীবাগ থানার এসআই ওয়ালিদ মাহমুদ জানান, এ ঘটনায় আরজুর তিন সহযোগী সাগর, মামুন ও মনিরকে আটক করা হয়েছে। স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পরপরই ৱ্যাবের একটি দল অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা আরজুকে আটক করে।

পুলিশ সূত্র জানায়, আরজু স্থানীয় সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় চাঁদাবাজি ও হামলা ভাঙচুরের একাধিক অভিযোগে মামলা রয়েছে। আরজু স্থানীয় প্রভাবশালী কেজি করিম বাবলুর ছত্রছায়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এবং চাঁদাবাজি করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুর দুইটার দিকে গণকটুলী এলাকায় রাজাকে সাগরসহ তিন যুবক পেটাতে পেটাতে ক্রিকেটের দুটি স্ট্যাম্প ভেঙে ফেলে। এ সময় রাজা বাঁচার জন্য অনেক আকুতি মিনতি করে। কোনো কথা না শুনে রাজাকে পেটাতে থাকে ওই তিন যুবক। এরপর রাজার কথা বলা যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ওই তিন যুবক পালিয়ে যায়। অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মারধরের সময় আরজু উপস্থিত ছিলো। তার নির্দেশেই রাজাকে পেটানো হয়।