কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া শহরে জাতীয় শোকদিবসের কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোমিনুর রহমান মোমিজের ক্যাডারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দু পক্ষের এ সংঘর্ষে সবুজ নামে একজন নিহত ও গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর লাইসেন্স করা একটি অস্ত্রসহ একজনকে আটক করেছে ৱ্যাব। এছাড়া শহরের মিলপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। শোক দিবসে জাতীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন না করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রির কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় জেলা আওয়ামী লীগ শহরের মিলপাড়া এলাকা থেকে শোকযাত্রা বের করে। শোকযাত্রাটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মজমপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে সমাবেশ করে। এ সময় নৈতিক স্খলনের দায়ে দল থেকে বহিষ্কৃত কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের নেতৃত্বে তার কর্মী-সমর্থকরা শোকযাত্রা করে সমাবেশ স্থলে এসে পৌঁছুলে একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে ৩-৪ রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপি দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের কর্মী আহত সবুজ, বিদ্যুত ও আজমল হোসেনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সবুজকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিদ্যুত ও আজমল হোসেনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নিহত সবুজ ঢাকা ঝালুপাড়া এলাকার মোবারকের ছেলে। শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ নিহত সবুজকে যুবলীগ কর্মী বলে দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে কালো পাঞ্জাবি ও সাদা পাজামা পরা এক যুবককে পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে শটগান হাতে নিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী শটগান হাতে নিয়ে গুলি ছুড়তে থাকা ওই যুবককে নিহত জাসদ নেতা পাঞ্জের আলীর ছেলে টুটুল বলে দাবি করেছেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসীন জানান, জাসদ নেতা পাঞ্জের আলী নিহত হওয়ার পর তার ছেলে টুটুল মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ ভালো করে খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে অস্ত্র হাতে ওই যুবক টুটুল কি-না? কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন খান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এ সংঘর্ষের ঘটনাটি আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা নয়। এটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। শোক দিবসের দিন যে বা যারাই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক না কেন তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। নিহত সবুজ দলীয় কর্মী নন বলে জানান সদর উদ্দিন খান। সংঘর্ষের ঘটনা প্রসঙ্গে আজগর আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সমাবেশ শেষ করে যখন আমরা চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম ঠিক তখনই গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। নিহত সবুজ আওয়ামী লীগের কর্মী কিনা এ বিষয়টি তিনি নিশ্চিত নন বলে জানান।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম বলেন, হত্যাকারী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না। খুনিকে খুব দ্রুত আটক করা হবে। ঘটনার পর লাইসেন্স করা একটি শটগানসহ মোমিজের সহযোগী মোস্তাফিজুর রহমান মধুকে আটক করেছে ৱ্যাব। সংঘর্ষের পর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজের লোকজন মিলপাড়া এলাকায় তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। সংঘর্ষের পর কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন ও পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম হাসপাতালে ছুটে যান এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ সমর্থিত সভাপতি সদর উদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী এবং বিদ্রোহী গ্রুপ সভাপতি পৌর মেয়র আনোয়ার আলী ও সাধারণ সম্পাদক কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রউফের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। শুক্রবার কুষ্টিয়া শহরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে আনোয়ার আলী গ্রুপ শোক দিবস উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে সমাবেশ করে।