গ্রেফতার আতঙ্কে মাজু গ্রামের মন্ডলপাড়ার ১৪০ পরিবার রাতে পুরুষশূন্য গ্রাম

আলমডাঙ্গার মাজু গ্রামে গৃহবধু উদ্ধারকে কেন্দ্র করে পুলিশ-গ্রামবাসির মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলার ভয়ে

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার মাজু গ্রাম রাতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ছে। গৃহবধু উদ্ধারকে কেন্দ্র করে পুলিশ-গ্রামবাসীর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের মণ্ডলপাড়ার ১শ ৪০ পরিবারের পুরুষ রাতে বাড়িতে ঘুমোচ্ছে না।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গার কালিদাসপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুরের জসিম উদ্দীনের হাইস্কুল পড়ুয়া মেয়ে অন্তরার সাথে ডাউকী ইউনিয়নের মাজু গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মিশকাতের প্রেমসম্পর্ক গড়ে উঠে। এরই এক পর্যায়ে জনৈক এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে অন্তরার আবার নতুন করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে। বিষয়টি জানতে পেরে পুনরায় গোপনে প্রেমিকের নিকট পালিয়ে যায় অন্তরা। কুষ্টিয়া আদালতে গিয়ে বিয়ে করে তারা। বেশ কয়েক মাস ঘরসংসার করছে তারা। প্রায় এক মাস আগে অন্তরার পিতা আব্দুল জলিল তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ তুলে প্রেমিকের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় প্রেমিকসহ সমস্ত আসামি জামিনে আছেন। অন্তরাকেও বিজ্ঞ আদালত তার স্বামীর জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট কোর্টের সার্চ আসামি হিসেবে রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের এসআই জিয়া সঙ্গীয় ফোর্সসহ মাজু গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় যান অন্তরাকে উদ্ধার করতে। পুলিশের সাথে অন্তরার পিতা ও চাচা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তারা মহিলা পুলিশকে নিয়ে অন্তরাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। অন্তরাকে ধরে পুলিশের গাড়িতে তুলেও ফেলা হয়। সে সময় পাশের বাড়ির হেলালের স্ত্রী শাহনাজসহ আশপাশের মানুষ দ্রুত ছুটে যায়। অন্তরাকে পুলিশের হাত থেকে কেড়ে নেয়া হয়। অন্তরাকে বিজ্ঞ আদালত স্বামীর জিম্মায় জামিন দিয়েছেন বলে পুলিশের নিকট দাবি করে তারা। তবে তাদের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয় তারা। পরদিন বৃহস্পতিবার ৬ আগস্ট এ সংক্রান্ত রিকল থানায় জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে এসআই জিয়া ওই গ্রামের নাহিদের জিম্মায় অন্তরাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন। এ বিষয়ে লেখালেখির সময় নতুন করে বিপত্তির সৃষ্টি করা হয়। গ্রামের জনৈক মহিলা মেম্বর ২ মহিলা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গালি দিয়ে পরিবেশ নতুন করে উত্তপ্ত করে তোলেন। এরই মধ্যে গ্রামের কয়েক শ মানুষ পুলিশের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন ছুটে গিয়ে হামলা করে পুলিশের মাইক্রোবাসে। লাঞ্ছিত করে ২ মহিলা পুলিশকে। পুলিশ আলমডাঙ্গা থানাকে অবহিত করলে পুলিশের পেট্রোল গাড়ি ও জামজামি পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গণপিটুনি শুরু করে। গ্রামবাসী অভিযোগ করে, পুলিশের গণপিটুনিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। বেআইনিভাবে জোটবদ্ধ হয়ে পুলিশের কর্তব্যে বাধা প্রদান, ভিকটিম ছিনতাই ক্ষয়-ক্ষতির অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০/৬০ জনকে আসামি করা হয়। তবে পুলিশ সে মামলার আসামিদের একজনকেও এখনও গ্রেফতার করেনি। তারপরও গ্রামবাসি চরম আতঙ্কে রয়েছে। মাজু গ্রামের মণ্ডল পাড়ার আব্দুল জলিল জানিয়েছেন, ওই পাড়ায় ১শ’ ৪০ ঘর লোকের বাস। এ পরিবারগুলোর একটিতেও রাতে পুরুষ মানুষ থাকেনা। দিনের বেলা কিছুটা আত্মগোপনে থেকে কাজ-কর্ম করলেও সন্ধ্যের পর সকল পুরুষ গাঢাকা দিয়ে থাকে। মণ্ডল পাড়ার খোদাবক্সের স্ত্রী আছিয়া খাতুন বলেন, তাদের পরিবারে শিশু বাদে ২ জন পুরুষ আছে, দুজনই রাতে বাড়ি থাকে না। আবু দাউদের স্ত্রী মুক্তি খাতুন জানান, তার স্বামীসহ পরিবারের মোট ৩ জন পুরুষের সকলেই রাতে ঘরে না ঘুমিয়ে বিভিন্ন আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে রাত কাটাচ্ছে। পুলিশের হেনস্থা আর গ্রেফতারের ভয়ে সারাপাড়ায় রাতে কোনো পুরুষ থাকে না।