চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট এক হরিজনের বাড়িতে বসে মদপান : পুলিশি অভিযানের খবরে এলোপাতাড়ি দৌঁড়!
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দামুড়হুদার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে নাজিম কসাইয়ের (৪৫) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নাজিম দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষ্ণুপুর গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে মুড়োর গাড়া মাঠস্থ নদীতে তার লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় গ্রামবাসী। খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে দামুড়হুদা থানা পুলিশ গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মাথাভাঙ্গা নদী থেকে নাজিমের লাশ উদ্ধার করে।
গতকালই দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়। বিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে রাত পৌনে ৯টার দিকে নামাজের জানাজা শেষে নিজ গ্রামের কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই নাজমুল বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলাগেটের সামনের হোটেল ব্যবসায়ী (প্রাক্তন) কলাবাড়ি-রামনগর গ্রামের মৃত আজিজুল হক ওরফে আজিজুল মেম্বারের ছেলে নাজিম উদ্দীন এলাকায় নাজিম কসাই হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সংশ্লিষ্টসূত্র বলেছে, গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। দু দিন পেরিয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি। তার স্ত্রীসহ নিকট আত্মীয়রা এদিক ওদিক অনেক খোঁজাখুঁজিও করেন। কিন্তু তার কোনো হদিস না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা হতাশ হয়ে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পীরপুর গ্রামবাসী মাথাভাঙ্গা নদীতে এক ব্যাক্তির মরদেহ ভেসে উঠতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান ও এসআই মহাব্বত আলী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে বিষ্ণুপুর মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে পৌছে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় নদী থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করেন। এরই মাজে সনাক্ত করেন তার নিকজনেরা।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরস্থ মাথাভাঙ্গা নদীর পাশের এক হরিজন পরিবারের বাড়িতে বসে নাজিমসহ বেশ কয়েকজন মদ পান করে। এ সময় সুইপার পল্লিতে পুলিশ রেড দিয়েছে খচর ছড়িয়ে পড়ে। এ খবর শোনামাত্রই নাজিমসহ তার সাথে পদপানকারীরা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে পালানোর চেষ্টা করে। অন্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও নাজিম মাতাল অবস্থায় মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয় এবং পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি ।
এদিকে নিহতের স্ত্রী বেবী খাতুন (৩৫) ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, পার্শ্ববর্তী কলাবাড়ি গ্রামের সিরাজুল, ইব্রাহিমপুরের মিনা ও প্রতিবেশী ছাদিকুল আমার স্বামীকে গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। রাতে বাড়ি না আসায় আমরা অনেক খোঁজখুঁজি করি। কিন্তু কোনো হদিস পাইনি। রোববার সকালে জনি বলে এক ছেলে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোনটি নিয়ে এসে আমার হাতে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর কলাবাড়ির সিরাজ আমাদের বাড়িতে আসে এবং আমার স্বামী বাড়ি ফিরেছে কি-না জানতে চায়। তার কাছে আমার স্বামীর কথা জানতে চাইলে সে বলে আমি কিছু জানি না, কোরমান জানে। তবে লোকমুখে শুনেছি সে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে চুয়াডাঙ্গা ব্রিজের নিকট মাথাভাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিষ্ণুপুর গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি মাথাভাঙ্গা নদীতে আমার স্বামীর লাশ পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামীর কোনো বদ অভ্যাস ছিলো না এবং সে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরেনি। ওই সিরাজুল ও তার সাথের লোকজন আমার স্বামীকে কিছু করেছে।
দু ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নিহত নাজিম ছিলো মেজ। সে দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের গোকুলখালী ও ভালাইপুর মোড়ে মাংস বিক্রি করতো। তার রয়েছে দু ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে ফিরোজ হোসেন (১২) গ্রামের মাদরাসায় ৫ম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে বায়জিদ (৬) গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের ১ম শ্রেণিতে পড়ে। একমাত্র মেয়ে নূর জাহানের বয়স মাত্র দেড় বছর।