বাংলাদেশে শুরু : বাংলাদেশের আগেই শেষ!

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ২০১১ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ সফরে রিকি পন্টিংয়ের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। আরেকটি বাংলাদেশ সফরের আগমুহূর্তে সেই অধ্যায়টির সমাপ্ত হলো। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের পদ থেকে তো বটেই, ক্যারিয়ারেরই ইতি টেনে দিচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক। অ্যাশেজের শেষ টেস্টের পরই অবসরে যাচ্ছেন এই ৩৪ বছর বয়সী। অর্থাৎ​ আবারও কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশ সফরেই নতুন অধিনায়ক হাল ধরতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার। যে নামটি স্টিভেন স্মিথ হবেন বলেই মোটামুটি নিশ্চিত।
ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে হারের সাথে সাথে অ্যাশেজ হারও নিশ্চিত হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার। এর পর ক্লার্ক চ্যানেল নাইনকে বলেছেন, ‘আমি আর একটা টেস্ট খেলব। এর পরই আমার ক্যারিয়ার শেষ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। ঝড়ের মুখে জাহাজ থেকে লাফিয়ে সতীর্থদের একা ফেলে পালিয়ে যেতে চাই না। তাই ওভালের শেষ টেস্টটা খেলব। শেষ চেষ্টাটা করে দেখতে চাই। তবে এটাই সরে যাওয়ার সময়।’

                অধিনায়কের পদ থেকে তাকে ছেঁটে ফেলা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল। অধিনায়কের পদ থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরও দলে খেলছেন- এমন সৌভাগ্য খুব বেশি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারের হয়নি। পন্টিং খেলেছিলেন ক্লার্কের নেতৃত্বে, কিন্তু ক্যারিয়ারটা দীর্ঘায়িত হয়নি। পন্টিংয়ের আগে সর্বশেষ খেলেছিলেন কিম হিউজ, সেটিও ১৯৮৫ সালের ঘটনা। অধিনায়কের পদের সাথে সাথে ক্যারিয়ারেও ইতি টেনে দেয়ার অস্ট্রেলীয় ‘রেওয়াজ’ খুব সম্ভবত বজায় থাকত ক্লার্কের ক্ষেত্রেও। নিজেই সম্মানের সাথে সরে দাঁড়ালেন। মাত্র চার মাস আগে বিশ্বকাপ জেতানো ক্লার্ক নিজেই নিজের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট, ‘এভাবে চলে যেতে চাইনি। তবে এই সিরিজ তো বটেই, গত ১২ মাসে যেভাবে খেলেছি সেটা আমার কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই হতাশার।’ তার নেতৃত্বে ৪৬ টে​স্টে ২৩টি জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, হেরেছে ১৬টিতে। ৭৪ ওয়ানডের ৫০টি জিতেছে, হার ২১টিতে। ১৩টি টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন আটটিতে। চতুর্থ অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক হিসেবে জিতেছেন বিশ্বকাপও।

                কিন্তু ক্লার্ক বলছেন, তিনি কিছু্ই দেননি, নিয়ে গেছেন কেবল দু হাতে, ‘অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এক শর বেশি টেস্ট খেলেছি। এ তো বিরাট সৌভাগ্যের। সব সময়ই বলেছি, ক্রিকেট আমার কাছে ঋণী নয়, আমিই ক্রিকেটের কাছে ঋণী। এত দীর্ঘ দিন খেলতে পেরেছি বলে আমি কৃতজ্ঞ।’ টেস্টে প্রায় ৫০ গড়ে ৮ হাজার ৬২৮ রান। ওয়ানডেতেও রান করেছেন সাত হাজারের বেশি। তবে ম্যাচ জেতানো বা ব্যাটের রানে কিংবা সেঞ্চুরি বোঝাবে না ক্লার্কের মাহাত্ম্য। ফিলিপ হিউজের বেদনাসিক্ত অকালপ্রয়াণের পর অস্ট্রেলিয়া​র শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছিলেন তিনিই। ক্লার্কের বিদায়ে আরও একজন ধ্রুপদি ব্যাটসম্যান হারিয়ে ফেলল ক্রিকেট। মাহেলা জয়াবর্ধনের পর কুমার সাঙ্গাকারা, এর পর ক্লার্ক—একে একে শিল্পীরা ঝরে যাচ্ছেন ক্রিকেট থেকে। ক্লার্ক যতই বিনয়ী হন, ক্রিকেট অবশ্যই তাকে মিস করবে। না করে পারেই না!