দর্শনার মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় গর্ভজাত শিশু মৃত্যুর অভিযোগ

ডাক্তার সেলিনা আখতার সিমু ও পারভীন ইয়াসমিনের শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

 

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনা মুক্তি ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারদের ভুলের কারণেই তার সন্তান মারা গেছে বলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজিব পারভেজ হিরন। তিনি অভিযুক্ত ডাক্তারদের শাস্তি দাবি করেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে হিরন দর্শনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শুধু শিশুর মৃত্যুই নয় আমার স্ত্রীকেও মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েছিলেন ক্লিনিকের ডাক্তাররা। সে এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির শ্রমিক কেরুজ লাইনপাড়ার বাসিন্দা রাজিব পারভেজ হিরন বলেন, আমার স্ত্রী সালমা আক্তার ১৬ বছর আগে প্রথম প্রতিবন্ধী কন্যাসন্তান প্রসব করে।। তারপরে গত ৮ মাস আগে পুত্রসন্তান গর্ভে আসে। গত ২১ মে আমার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন নির্ধারিত ছিলো। সে মোতাবেক আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ভর্তি করি। নার্সিং হোমের ডা. সেলিনা আখতার সিমু ও পারভীন ইয়াসমিন আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর পর আমাদেরকে জানান, গর্ভজাত বাচ্চাটি এখনো পরিপক্ক হয়নি। পরে তার ব্যথা যাতে না হয় সেজন্য ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩ দফায় ২১টি ইনজেকশন পুশ করেন আমার স্ত্রীর শরীরে। এ ছাড়া ১০টি প্রেসারের ট্যাবলেট এবং ১টি মস্তিষ্ক বিষয়ক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় তাকে। ২৩ মে ভোর ৪টার দিকে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার গর্ভে বাচ্চার অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে আমার স্ত্রী নেতিয়ে পড়ে। এ সময় অবস্থা বেগতিক বুঝে ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে ফেলে কক্ষ ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পরেই মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের জনৈক ম্যানেজার আমাদের জানান, রোগীকে দ্রুত এখান থেকে নিয়ে চলে যান। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য তাকে চুয়াডাঙ্গার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে সিজার করানো হয়। কিন্তু তার গর্ভের সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। চিকিৎসকরা জানান কয়েক ঘণ্টা আগে গর্ভের সন্তান মারা গেছে। আমার স্ত্রীর ব্লিডিং বেড়ে গেলে সে মারা যাবে আশঙ্কায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। আমি দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছাই। কর্তব্যরত ডাক্তার ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম করে বিরতিহীনভাবে ৫ দিন চিকিৎসা দিলে সে একটু সুস্থ হয়। সংবাদ সম্মেলনে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে হিরন আরও বলেন, আমার সন্তানকে আমি নিজ হাতে গোসল করিয়ে দাফন করেছি। পরিপূর্ণ পুত্রসন্তান। কিন্তু মুক্তি ক্লিনিকের ডাক্তাররা কীভাবে এ সন্তানকে অপরিপক্ক বললো তা আমি বুঝতে পারছি না। এ এক রকম হত্যা। ডাক্তাররা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। তাদের ভুলের কারণেই আমার সন্তান মারা গেছে। আমার স্ত্রী সালমা আক্তার (৩২) আর মা হতে পারবে না বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। আমাকে কেউ বাবা বলে ডাকবে না। সঠিক তদন্তপূর্বক অভিযুক্ত ডাক্তার ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তির দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমের স্বত্বাধিকারী ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, প্রসূতি মা এখানে ভর্তি হওয়ার পরে আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখা যায় তার বাচ্চা পরিপক্ক হয়নি। এজন্য সিজার করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রসূতিকে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে রেফার করা হয়।