এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে আজ : শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়ে আসন বাড়ছে না

স্টাফ রিপোর্টার: আজ রোববার প্রকাশিত হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেছে, যা ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। তাই এইচএসসি দেয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই এখন কোচিং নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। তাদের লক্ষ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়া। অভিভাবকরাও মহা চিন্তায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে, শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়ে এবার আসন তেমন একটা বাড়েনি। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের চেয়েও তীব্র হবে ভর্তিযুদ্ধ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণত উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয় না। গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৭০ হাজার ৬০২ জন। অথচ জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার আসনসংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার। আর সরকারি মেডিক্যাল, ডেন্টাল, টেক্সটাইল কলেজ ও মেরিন একাডেমিতে আসন রয়েছে মাত্র চার হাজার ২৯৮টি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার আসন ঘিরেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তুঙ্গে থাকবে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, গত বছরের তুলনায় এবার আসনসংখ্যা সামান্য বাড়বে। তবে সে হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি। দেশে এখন ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও দুটির কার্যক্রম শুরু হয়নি। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের হিসাবে ৩৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ৪৩ হাজার ২৪৯টি। এবার এর চেয়ে ১০ শতাংশ আসন বাড়তে পারে। বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির। অথচ এ বিষয়ে পড়ার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা খুবই কম। এছাড়া যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ রয়েছে সেখানেও আসন কম। শিক্ষার্থীদের প্রধান টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কিন্তু সেখানে আসন মাত্র ছয় হাজার ৬০০টি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ফার্মেসিতে আসন মাত্র ৬৫টি। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ফলিত পদার্থবিজ্ঞান, ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন ৭০, ফলিত রসায়ন ও কেমি কৌশলে ৬০, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৬০ এবং নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাত্র ২৫টি। আর তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসন মাত্র ৩০টি। এ ছাড়া পদার্থ, গণিত, রসায়ন, পরিসংখ্যান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগেও আসন একেবারে কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি চাহিদা তুঙ্গে থাকলেও আসন মাত্র এক হাজার ১৭০টি। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং, ফিন্যান্সের প্রতিটিতে আসনসংখ্যা ১৮০টি করে। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্সে ১২০টি, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের প্রতিটিতে আসন ১১০টি করে। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন কিছু বিভাগ রয়েছে, যেগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ একেবারেই কম। তবে অন্য বিষয়ে সুযোগ না পেয়ে এখানে ভর্তি হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মাইগ্রেশন করে অনেকে চলেও যায়। ফলে কিছু আসন ফাঁকা পড়ে থাকে। কলা অনুষদের পালি ও বুড্ডিস্ট, উর্দু, সংস্কৃত এবং শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের প্রতিটিতে আসনসংখ্যা প্রায় ১০০-এর কাছাকাছি। বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়। তার পরও কর্তৃপক্ষ চাহিদাসম্পন্ন বিভাগে আসন না বাড়িয়ে এসব বিভাগ দিনের পর দিন রেখে দিয়েছে।

এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, গতবারের তুলনায় আমাদের আসনসংখ্যা তেমন একটা বাড়বে না। এখনো আমাদের স্থানের সংকট রয়েছে। যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, তাই নতুন সুউচ্চ ভবন ছাড়া আসন বাড়ানোটা কষ্টকর। আমরা চেষ্টা করছি যুগোপযোগী বিভাগগুলোতে আসন বাড়াতে। তবে সেটাও সময়ের ব্যাপার। যেসব বিষয়ের চাহিদা নেই, সেগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ও করা যেতে পারে। কিন্তু এগুলো প্রাচীন বিভাগ। দেশের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখার সুযোগও রাখতে হবে। মূল কথা আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। যাতে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ না বাড়ে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৬৬০০, রাজশাহীতে ৩৮৫১, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২০০, বুয়েটে ৯৯১, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫৩৩, জাহাঙ্গীরনগরে ২২৩৫, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪২৬, শাবিপ্রবিতে ১৭০৮, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৭৯, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০০, হাজী মোহাম্মদ দানেশে ১৮০০, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ২৪৬৩, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ৭০০, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০, চট্টগ্রাম প্রকৌশলে ৬৪১, রাজশাহী প্রকৌশলে ৭২৫, খুলনা প্রকৌশলে ৮১৫, ঢাকা প্রকৌশলে ৫৬০, নোয়াখালী বিজ্ঞানে ৯০৩, জগন্নাথে ২৮৪৫, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮০০, কবি নজরুলে ৫৭০, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারিতে ২১০, সিলেট কৃষিতে ৩৭০, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ৬৫৫, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে ৪৮০, বেগম রোকেয়ায় ১২৪৫, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ৫৫০, শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ৬৮০, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩৬৫ এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪১০টি আসন রয়েছে।

এবার থেকে কার্যক্রম শুরু হওয়া রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা ১০০টি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে আসন দুই লাখ চার হাজার ২০০টি ও পাস কোর্সে দুই লাখ ৪০ হাজার। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন ৩৪ হাজার। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। এ ছাড়া ৭৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবে আসন ৭২ হাজার ৩০৫টি। তবে এক বছরে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসাবে আসন দুই লাখ ১৬ হাজার ৯১৫টি।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও মেরিন একাডেমি। কিন্তু সেখানে আসন খুবই কম। তবে বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের সংখ্যা বাড়লেও উচ্চ ফির কারণে উচ্চবিত্ত ছাড়া অন্য কারো সেখানে পড়া সম্ভব নয়। ২২টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসনসংখ্যা ২৯৫১টি, ৯টি সরকারি ডেন্টালে ৫৬৭টি, ছয়টি সরকারি টেক্সটাইলে ৪৮০টি ও সরকারি মেরিন একাডেমিতে আসন মাত্র ৩০০টি। তবে ৫৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪২৭৫টি, ১৪টি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ৮৯০টি এবং ১৭টি বেসরকারি মেরিন একাডেমিতে ১৩৬০টি আসন রয়েছে।